logo
আপডেট : ২১ এপ্রিল, ২০২২ ১১:২২
ক্ষেতে তরমুজ হয়নি, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কৃষক
বরগুনা প্রতিনিধি

ক্ষেতে তরমুজ হয়নি, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কৃষক

ফুল আসলেও তরমুজ গাছে ফল ধরেনি

বরগুনার আমতলী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে তরমুজ ক্ষেতে ফল ধরেনি। এতে আমতলী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার তরমুজ চাষি নিঃস্ব হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিপাকে পড়েছেন দাদনে সার বিক্রি করা মহাজনরা।

আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার আঠারোগাছিয়া, হলদিয়া, সদর, চাওড়া, কুকুয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নে তিন হাজার পাঁচ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন পাঁচ হাজার চাষি। চাষিদের নিরলস প্রচেষ্টায় তরমুজ গাছ ভালো হয়েছে।

তবে তরমুজের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু নিম্নমানের বীজ রোপণ ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে তরমুজ গাছে ফুল ধরলেও ফল আসেনি। গাছে ফলন না ধরায় অন্তত দেড় শত কোটি টাকা লোকসান হবে বলে কৃষকদের দাবি।

বুধবার (২০ এপ্রিল) চাওড়া ইউনিয়নের পাতাকাটা, চন্দ্রা, হলদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ রাওঘা, কুকুয়ার কৃষ্ণ নগর, আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী, গুলিশাখালী, হলদিয়া ও টেপুড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠ ভরা তরমুজ গাছ। তবে গাছে তরমুজ নেই। অধিকাংশ তরমুজ ক্ষেতে পুড়ে গেছে।

হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুরা গ্রামের মো. কাওসার বলেন, ‘ধারদেনা করে তিন একর জমিতে পৌনে দুই লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু এক টাকাও বিক্রি করতে পারিনি। কিভাবে ঋণ পরিশোধ করব সেই চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।’

ওই গ্রামের চাষি মজিবর শেখ বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। পাবনা মহাজনের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা দাদন এনেছি। আমার নিজের অনেক টাকা খরচ করেছি। ক্ষেতে তরমুজ না আসায় দুশ্চিন্তায় আছি। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য পাওনাদাররা চাপ দিচ্ছেন। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।’

স্থানীয় রাসেল ফকির বলেন, ‘পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করে ৯ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু ছয় একর জমিতে কিছুই হয়নি। গাছ পুড়ে গেছে। তিন একর জমিতে কিছু ফলন হয়েছে। এ বছর অন্তত চার লাখ টাকা লোকসান হবে।’

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের বাহাউদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘ধারদেনা করে এ বছর ৮ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। গাছে তরমুজ হয়নি। অধিকাংশ গাছ পুড়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’

তরমুজ ব্যবসায়ী মো. সোহেল রানা বলেন, ‘এ বছরের মতো এমন অবস্থা তরমুজ চাষিদের কখনো হয়নি। তরমুজ চাষিরা পথে বসে গেছে। ঋণের বোঝা নিয়ে তরজুম চাষিরা এখন দিশেহারা। অনেক চাষি ঋণের জন্য ইতোমধ্যে গা ঢাকা দিয়েছে।’

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিএম রেজাউল করিম জানান, মানসম্মত বীজ রোপণ করতে না পারা ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরাগায়ন হয়নি। ফলে গাছে ফল ধরেনি। সরকারিভাবে তরমুজের বীজ সরবরাহ না করায় বেসরকারি কোম্পানিগুলো নষ্ট বীজ দিয়ে চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

তিনি আরো জানান, তরমুজ চাষাবাদের জন্য জেলার আমতলী ও তালতলী উপজেলা ভালো। এ অঞ্চলের তরমুজ চাষিদের প্রশিক্ষণসহ বীজ সরবরাহ করা গেলে তারা বেশ উপকৃত হবেন।