ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় হতদরিদ্রদের জন্য সরকারি বরাদ্দের ১০ টাকা কেজির চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক ইউপি সদস্যের (মেম্বার) বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে চালের ডিলার।
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় স্থানীয় গ্রামপুলিশ নরেশ চন্দ্র দাস থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরই ঘটনার তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
হারেজ ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য এবং ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার।
অভিযোগের বরাতে ফুলবাড়িয়া থানার এসআই জ্যোতিষ চন্দ্র দেব জানান, হারেজ আলী হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত ডিলার। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের একটি গুদামে চাল রেখে বিক্রি করতেন।
গত শুক্রবার ভোররাতে হারেজ গুদাম থেকে প্রায় ৩০ বস্তা চাল একটি পিকআপ ভ্যানে করে সরিয়ে ফেলেন। পিকআপের ধাক্কায় গুদামের সামনের প্লাস্টার ভেঙে যায়। গ্রামপুলিশ নরেশ চন্দ্র দাস বিষয়টি দেখতে পান। চেয়ারম্যানের পরামর্শে নরেশ থানায় অভিযোগ করেন।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে ৬৫৮টি কার্ডের বিপরীতে সরকারি গোডাউন থেকে ১৯ টন ৭৪০ কেজি চাল উত্তোলন করেন ওই ডিলার। গত কয়েক দিনে সব কার্ডের চাল বিতরণ হয়েছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বাস্তবে ৬০ জন কার্ডধারী তাদের চাল পায়নি।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের এনায়েতপুর এলাকার কার্ডধারী সুফিয়া বেগম, দুলাল মিয়া, আবু হানিফ জানান, প্রায় ৬-৭ মাস যাবত তাদের চাল দেওয়া হয়নি। ডিলার হারেজ আলীর কাছে গেলে কোনো সদুত্তর দেন না তিনি। সরবরাহ তালিকায় তাদের নাম থাকা সত্ত্বেও চাল না পেয়ে কষ্টে রয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার হারেজ আলী বলেন, ‘আমি মাইকিং করে চারদিন চাল দিয়েছি। কেউ না পেয়ে থাকলে তারা এলে চাল দিব।’
চাল অন্যত্র বিক্রি করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে চাল বিক্রি করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ তোলা হয়েছে। তদন্ত করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’
এনায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বুলবুল হোসেন বলেন, ‘কার্ডধারীদের চাল না দিয়ে চাল অন্যত্র সরিয়ে ফেলার ঘটনাটি দুঃখজনক। তদন্তে প্রমাণিত হলে ডিলারের বিরুদ্ধে প্রশাসন যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি।’
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ওই গোডাউন পুলিশ পরিদর্শন করেছে। আমরা স্থানীয় দুদকে জানিয়েছি। তারা তদন্ত করতে মাঠে নেমেছেন। এ ছাড়া অভিযোগটি দ্রুত মামলা হিসেবে নথিবদ্ধ করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদুল করিম বলেন, ‘গ্রামপুলিশের ডিলারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার কথা নয়। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। হতদরিদ্রের চাল না দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। তদন্তসাপেক্ষে তার ডিলারশিপ বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’