রাজধানীর কলাবাগানে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে আর কোনো সাক্ষী না আসায় পিছিয়ে গেল বিচার কাজ। এর আগে গত ৩১ মার্চ নিহতের কথিত বন্ধু ও মামলার একমাত্র আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তার বাবা।
বৃহস্পতিবার ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত আগামী ২ জুন আলোচিত এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী ৫৫ জন।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা অরেঞ্জ ভোরের আকাশকে জানান, এদিন ওই কলেজছাত্রীর মায়ের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি অসুস্থ। এজন্য সময় আবেদন করা হয়। বিচারক আগামী ২ জুন সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ দিয়েছেন।
এ আইনজীবী আরো জানান, বৃহস্পতিবার আসামি দিহানের আইনজীবী বোরহান উদ্দিন তার একটি গাড়ি তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে নিজেদের হেফজতে নেওয়ার আবেদন জানালে গাড়িটির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, গত বছরের ৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা মা কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এর এক ঘণ্টা পরে তার বাবাও ব্যবসায়িক কাজে বাসা থেকে বের হন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থী তার মাকে ফোন করে কোচিং থেকে পড়ালেখার পেপার্স আনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।
মামলার একমাত্র আসামি ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া শিক্ষার্থী দিহান দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে ফোন করে ওই শিক্ষার্থীর মাকে জানান, মেয়েটি তার বাসায় গিয়েছিলেন। হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। অফিস থেকে বের হয়ে আনুমানিক দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ভুক্তভোগী কিশোরীর মা হাসপাতালে পৌঁছেন।
হাসপাতালের কর্মচারীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, আসামি তার কলাবাগান ডলফিন গলির বাসায় ডেকে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আসামি নিজেই তাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
ঘটনার পরদিন গত বছরের ৮ জানুয়ারি কালাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ এর ২ ধারায় খুনসহ ধর্ষণ মামলা করেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতলের জরুরি বিভাগে গিয়ে তার স্ত্রী কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন, তাদের মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
এজাহারে আরো বলা হয়, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পারেন দিহান তাদের মেয়েকে প্রেমের প্রলুব্ধে ধর্ষণের উদ্দ্যেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যান। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের সময় অমানবিক কার্যকলাপ করায় গোপাঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত বছরের ৮ নভেম্বরে এ মামলায় শুধু দিহানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক খালেদ সাইফুল্লাহ। এর আগে তদন্ত করে দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।