ঈদের সময় রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববতী জেলাগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাটের শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতি এ দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌপথে ফেরি বাড়ানো, সার্বক্ষণিক ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে এ দুটি নৌপথসহ পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচলের ওপর কঠোর নজরদারির আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববতী জেলাগুলোর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পদ্মার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। ঈদে স্বজনদের সান্নিধ্যপ্রত্যাশী এসব জেলার অগণিত যাত্রী বাসসহ বিভিন্ন ধরনের সড়কযানে গন্তব্যে যেতে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করেন।
সংগঠনটির সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে এসব নৌপথে ফেরির সংখ্যা বেশি থাকলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার স্বার্থে ফেরি চলাচল সীমিত ও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে পাঁচটি ও শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌপথে দুটি ফেরি চলাচল করছে এবং রাতে এসব ফেরি বন্ধ থাকে। এতে যাত্রীবাহী গাড়ি পারাপারে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি ও ঘরমুখি মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অপ্রত্যাশিত নৌদুর্ঘটনা এড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে বিবৃতিতে বলা হয়, শিমুলিয়া থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরঘাট- এ দুটি নৌপথে ৮৬টি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ৩৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চ আয়তনে খুব ছোট ও অধিকাংশই বহু বছর আগের। এগুলোর যথাযথ ফিটনেস নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তার পরও ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে দূরপাল্লার বিভিন্ন সড়কের বাসযাত্রীরা বাধ্য হয়ে এই লঞ্চগুলোতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যান।
বিগত বছরগুলোর ঈদযাত্রার উদাহরণ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, ঘরমুখী জনস্রোত বেড়ে গেলে এসব পুরনো ও ছোট লঞ্চেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা হয়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, পদ্মার তিনটি নৌপথেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্পিডবোট চলাচল করে এবং দ্রুতগতির এসব ক্ষুদ্র নৌযানে সবসময়েই ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী বহন করা হয়। ঈদে যাত্রীসংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া প্রতি ঈদের আগে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং পকেটমার, টানাপার্টি ও প্রতারকচক্রের দৌরাত্ব্য বেড়ে যায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ ও জনভোগান্তি লাঘবের স্বার্থে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরঘাট নৌপথে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
বিবৃতিতে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এ দুটি নৌপথসহ পদ্মার তিনটি নৌপথে লঞ্চ ও স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধ এবং শিমুলিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরুরি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।