logo
আপডেট : ২২ এপ্রিল, ২০২২ ২২:০৪
নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ
নাহিদ হত্যায় জড়িত তিন হেলমেটধারীকে খুঁজছে পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক

নাহিদ হত্যায় জড়িত তিন হেলমেটধারীকে খুঁজছে পুলিশ

নিহত নাহিদ

নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে হেলমেট পরে অংশ নেওয়া যুবকদের খুঁজছে পুলিশ। সংঘর্ষে কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদ হত্যাকাণ্ডে এ বাহিনীর সদস্যরা জড়িত বলে নিশ্চিত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হেলমেট পরা তিন যুবক নাহিদকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের মধ্যে একজন নাহিদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার মাথায় কালো রঙের হেলমেট পরা ছিল। হাতে ছিল রামদা, পরনে কলাপাতা রঙের টি-শার্ট এবং প্যান্ট। এ ছাড়াও আরো ২০ থেকে ৩০ জন নানাভাবে হামলায় অংশ নেয়। হামলায় অংশগ্রহণকারীরা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঢাকা কলেজের একাধিক সূত্র।

পুলিশের রমনা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নাহিদকে হামলাকারীরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছেন। হামলাকারীরা হেলমেট পরে নাহিদকে হামলা করে। অপরাধী হিসেবে নিজেদের আড়াল করতেই সেদিন তারা হেলমেটের আশ্রয় নিয়েছিল বলেও মনে করছেন তিনি। তবে ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হন্যে হয়ে খুঁজছে তিন যুবককে।

তারা মনে করছেন, হলুদ ও লাল হেলমেট পরিচিত দুই যুবককে খুঁজে পাওয়া গেলে নাহিদকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে কাল হেলমেট পরিহিত যুবককে বের করা সম্ভব। এ নিয়ে যদিও শিক্ষার্থীরা মুখ খুলছেন না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা গ্লোব শপিং সেন্টার ও নূরজাহান মার্কেটসহ কলেজের আশপাশের এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। শুক্রবার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীকে নাহিদ হত্যাকাণ্ডের ভিডিও দেখালে তারা বলেছেন, হেলমেট পরা যুবকরা লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে সেদিন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলেন।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুরি ও লোহার রড নিয়ে নূরজাহান মার্কেটের ভেতরে একদল দোকানদারকে ধাওয়া করেন। ছাত্ররা যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিল, তখন সিঁড়ির গোড়ায় ব্লু টি-শার্ট পরা যুবককে পায় এবং বেধড়ক মারধর করে। এরপর কিছুটা দূরে গিয়ে সে পড়ে যায়। তিনি বলেন, হেলমেট পরা এক যুবক নেভি ব্লু টি-শার্ট পরা যুবককে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় কোপাচ্ছিল।

নূরজাহান মার্কেটের একটি দোকানের মালিক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ঢাকা কলেজ গ্রুপের বেশিরভাগ যুবক হেলমেট পরেছিলেন এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অনেকে হেলমেট পরা ছিলেন।

তিনি বলেন, দুপুরের দিকে দেখলাম, এক যুবক রাস্তায় পড়ে আছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষের দুজন যুবক তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বের হচ্ছিল।

ঢাকা কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আঘাতকারী যুবকরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ঘটনাস্থলও দেখিয়েছেন। তবে হামলাকারীদের নাম বলেননি।

এ ঘটনার আগের রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেটের তিনটি দোকানে ভাঙচুর চালান। একাধিক ব্যবসায়ী জানান, নিউমার্কেটের ২ নম্বর গেটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ভাঙচুরকারীরাও হেলমেট পরেছিলেন।

ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফুয়াদ হাসান জানান, নাহিদকে কারা হত্যা করেছে তা খুঁজে বের করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে গোয়েন্দা বাহিনীর একজন সদস্য বলেন, নাহিদকে হামলায় হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেয়। তাদের মধ্যে শেষ মুহূর্তে নাহিদকে উপর্যুপরি কুপিয়ে আহত করা কালো হেলমেট পরিহিত ও হালকা গড়নের যুবক এবং তাকে নিবৃত্ত করতে ছুটে যাওয়া লাল ও হলুদ হেলমেট পরা যুবক ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের হামলার ধরন দেখে বোঝা গেছে, তারা এর আগেও এমন হামলা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের হাতে ওই সময় লাঠি ইটপাটকেল ছাড়া আর কিছু ছিল না, কিন্তু অপরদিকে হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যেকের হাতে রামদা, রড, স্টিলের হাতল, ভাঙা কাঠ ছিল। তবে নাহিদকে যারা হামলা করেছে তারা সকলে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, নাহিদকে হামলাকারীরা কীভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেছে তার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে সেটি তারা সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়াও ওই ভিডিও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সংগ্রহ করেছে। এখন সেই ভিডিও’র সূত্র ধরে হেলমেট বাহিনীর সদস্যদের খোঁজা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। সামাজিক মাধ্যমে এক ব্যক্তি ভিডিওটি আপলোড করেন। দ্রুত সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।

ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের নেতা মীর মাসুম বিল্লাহ বলেন, তিনিও ভিডিওটি দেখেছেন। কিন্তু তাদের তিনি চিনতে পারেননি। তিনি মনে করছেন হামলাকারীরা কেউই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নন। এমনকি তারা ছাত্রলীগের কর্মী ও নয়। মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, নাহিদকে বহিরাগতরা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেশে এসে হামলা করে থাকতে পারে। তবে যেই হামলা করুক না কেন তাদের যথাযথ শাস্তি দাবি করেছেন মাসুম।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ফারুক মো. শরিফুজ্জামান বলেন, আমরা এমন একটি ভিডিও পেয়েছি। সেই ভিডিওতে কয়েকজন যুবককে নাহিদকে হামলা করতে দেখা যাচ্ছে। তবে তাদের পরিচয় এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।