দুই বছর বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে আবারও বসছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলিখেলা উপলক্ষে বৈশাখী মেলা। এবার আয়োজন করা হচ্ছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলী খেলার ১১৩তম আসর। এই বলী খেলাকে ঘিরে নগরীর লালদীঘি এলাকায় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাহারি পণ্য নিয়ে নগরীর লালদীঘি এলাকায় হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে নগরীর ছয়টি সড়কে যানবাহন চলাচল রোববার থেকে তিন দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নগরীর ছয়টি সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের তথ্য জানানো হয়।
সিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম হবে। মেলা চলাকালীন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আগত
লোকজনের সমাগমের কারণে মেলাকেন্দ্রিক আশপাশ এলাকার নিম্নোক্ত রাস্তাসমূহে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত লালদীঘি অভিমুখী সকল প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
মেলাস্থলের পার্শ্ববর্তী যে সকল রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করা হবে সেগুলো হলো-আন্দরকিল্লা মোড় (জামে মসজিদের সামনে) হতে বক্সিরহাট-লালদিঘীগামী রাস্তা, জেলা পরিষদ মার্কেট হতে টেরিবাজার-আন্দরকিল্লাগামী রাস্তা, সিনেমা প্যালেস হতে কে
সি দে রোড হয়ে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত রাস্তা, জহুর হকার্স ও মহল মার্কেট হতে বাটা ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তা, টেরিবাজার ফুলের দোকান হতে টেরিবাজারগামী রাস্তা এবং আমানত শাহ মাজার রোডের মুখ হতে টেরিবাজারগামী রাস্তা।
এছাড়াও নগরীর টেরিবাজার, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাক্তাইগামী সব ধরণের পণ্যবাহী গাড়ি ও বড় গাড়ি রাজাখালী দিয়ে প্রবেশ করে মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে বের হয়ে যাবে। লালদীঘি আবদুল জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে লোকজনের সমাগম এবং গাড়ি ডাইভারশনের কারণে অত্র এলাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকবে। এলাকার সড়কসমূহে স্বাভাবিক চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রী সাধারণকে জরুরি প্রয়োজনে এই এলাকার সড়ক এড়িয়ে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের জন্য সিএমপি’র ট্রাফিক-দক্ষিণ বিভাগের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এবার বলী খেলা লালদিঘী ময়দানের পাশে হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, ‘লালদিঘী ময়দানের সংস্কার কাজ চলার কারণে সেখানে জব্বারের বলী খেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু মাঠ না পাওয়ার অজুহাতে কোনোভাবেই এই ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা বন্ধ করা যাবে না। তাই জেলা পরিষদ চত্বরে বিশ ফুট বাই বিশ ফুট স্টেজ করে বলী খেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ২৫ এপ্রিল বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে জব্বারের বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী বছর থেকে আবার লালদীঘির ময়দানে এই বলী খেলার আয়োজন করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে লড়তে দেশের তরুণ যুবকদের শারীরিকভাবে তৈরি করতে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার এই বলী খেলার প্রচলন করেছিলেন। নগরীর লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এই জব্বারের বলী খেলা প্রথম থেকেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এই বলী খেলাকে ঘিরে লালদীঘির বিশাল এলাকাজুড়ে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলাও। যে মেলায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন কুটির ও লোকজ সামগ্রীর পসরা নিয়ে মেলায় হাজির হন ব্যবসায়ীরা। শুরু থেকেই গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত সকল জিনিসপত্রই পাওয়া যেত এই মেলায়। সেই ধারাবাহিকতা এখনও অটুট রয়েছে।