logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:২৩
টাঙ্গাইলে যমুনার ব্যাপক ভাঙন
বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি
জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল

বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি

যমুনার নদীতীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে

টাঙ্গাইলের নাগরপুরের ভারড়া ইউনিয়নের মোকনা এলাকার বাসিন্দা রহিমা। এখন পর্যন্ত পাঁচবার ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধার। তিনি বলেন, ‘যাওয়ার আর জায়গা নাই। কতবার বাড়ি পাল্টাবো। এ পর্যন্ত পাঁচবার পাল্টাইলাম। প্রতিবছর বাড়ি পাল্টাইবার লেইগা টাকা পাবো কোথায়? অন্য কোথাও যে বাড়ি বানামু, সে জায়গাও নাই।’

সদর উপজেলার মাহমুদনগর গ্রামের বাসিন্দা রাহেলা খাতুন (৬৪)। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে ভাঙনে তিনবার বাড়ি হারিয়েছেন তিনি।

রাহেলা খাতুন বলেন, ‘জামাইডা মারা গেছে ১০ বছর হলো। এর মধ্যে দুই ছেলেরে নিয়া তিনবার বাড়ি সরাইলাম। ছেলে দুটো মাটি কাটে। জমিজমা নাই যে আবাদ করে খাবো। এবার ভাঙনে যদি বাড়ি ভাঙে তা হলে আর যাওয়ার জায়গা নাই।’
নাগরপুরের যমুনা নদীপাড়ের মানুষের অবস্থা এ দুই বৃদ্ধার মতোন।

বর্ষা মৌসুম আসার আগেই আকস্মিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীর টাঙ্গাইল অংশে। এতে করে নদীতীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। অব্যাহত ভাঙনে হুমকিতে রয়েছে মসজিদ, ঈদগা মাঠ ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের মানুষগুলোর। ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি নদীপাড়ের মানুষদের। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, ভাঙনকবলিত এলাকা টিকিয়ে রাখতে সব প্রস্তুতি রয়েছে।

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। তবে চলতি বছরে অসময়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে দিশেহারা জেলার সদর উপজেলা ও নাগরপুর উপজেলার যমুনাতীরবর্তী মানুষগুলো।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে নাগরপুরের সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইশা মাইঝাইল, খাষ ঘুনিপাড়া, চরসলিমাবাদ, ভূতের মোড়, ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, মারমা, উলাডাব, মোকনা, সদর উপজেলার কাকুয়া, মাহমুদনগর ও কাতুলী ইউনিয়নে।

ইতোমধ্যে এলাকাগুলোর অনেক বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে পড়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। ফলে চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারেন। ভাঙন প্রতিরোধে জনপ্রতিনিধিরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেয় না।

মোকনা এলাকার বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ‘সব নেতারা বলে যায় ভাঙনের সময় বাঁধ দিয়ে দিবে। ভাঙনের সময় কোনো নেতাকেই পাওয়া যায় না।’

কাকুয়া এলাকার বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে। সারাবছর আর কোনো খোঁজখবর থাকে না। পানি যখন আশা শুরু করে তখনি ভাঙন শুরু হয়।’

টাঙ্গাইল পাইবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করা যাবে এমনটা আশা করছি।’