দীর্ঘদিনের রাজপথের পোড় খাওয়া দুই নেতাকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করায় বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের তৃণমূল থেকে শুরু করে সর্বত্র আশার সঞ্চার হয়েছে। নতুন কমিটি হওয়ার পর ছাত্রদলের তৃণমূল এখন বেশ চাঙ্গা। তৃণমূলের নেতারা মনে করছেন, নতুন কমিটির নেতারা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একদিকে যেমন কমিটি পুনর্গঠন করবেন, পাশাপাশি বর্তমান সরকার বিরোধী সব আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। নতুন নেতৃত্ব সংগঠনটির গতি বাড়ানোর পাশাপাশি বিএনপির আগামী দিনের আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এ নতুন নেতৃত্ব কতটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভোরের আকাশকে বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নতুন যে কমিটি দিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। এদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রদের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্রদলের এ নতুন কমিটি আগামীতে স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী।
ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের অভিভাবক আমাদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও পালন করব। তিনি বলেন, দলের স্বার্থে পরিবারের সঙ্গেও আপস করিনি। সেটি মাথায় রেখে আগামী দিনে আমাদের দল বিএনপি এ সরকার পতনে যে কর্মসূচি গ্রহণ করবে, তা যথাযথভাবে ছাত্রদল পালন করবে। তাছাড়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের সহাবস্থানে কাজ করবে ছাত্রদল। এছাড়া ছাত্রদলের নেতাকর্মীদেরও তাদের কাছে থাকা প্রত্যাশা পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
আরো পড়ুন: ছাত্রদলের নতুন সভাপতি শ্রাবণ, সম্পাদক জুয়েল
জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া হয় ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন ও ইকবাল হোসেন শ্যামলের নেতৃত্বাধীন কমিটি। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্যের আংশিক কমিটির ঘোষণা করা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে ব্যর্থ হয় খোকন ও শ্যামলের নেতৃত্বাধীন কমিটি।
এ প্রেক্ষাপটে গত ১৭ এপ্রিল কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয় ছাত্রদলের। নতুন কমিটির সভাপতি গত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমান কমিটির সভাপতির দীর্ঘ ত্যাগের ছাত্র রাজনীতির ক্যারিয়ার রয়েছে। পরিবারের সঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরোধ থাকায় তিনি প্রায় ১৩ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। এছাড়া রাজপথের নির্যাতন শিকার ও অসংখ্য মামলারও আসামি হয়েছেন তিনি। রাজনীতিতে এ ছাত্র নেতার ত্যাগের বিষয়টি এখন ব্যাপক আলোচিত। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদকও বেশ পোড় খাওয়া। নবগঠিত কমিটির নেতাদের নিয়ে কোনো পক্ষের বা কারো কোনো আপত্তি নেই। গোটা ছাত্রদল ও বিএনপির সবাই এ কমিটিকে সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
যশোর জেলা ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে নতুন নেতৃত্ব সবার মাঝে আশার সঞ্চার করেছে। তারা সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন ও আগামী দিনের আন্দোলনে ব্যাপক সহায়ক হবে। নবগঠিত এ কমিটি নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ব্যাপক আশাবাদী বলে দাবি করেন তৃণমূলের এ নেতা।
ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা জানান, বিগত কমিটি বেশ কাজ করলেও ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন ও ক্যাম্পাসের কমিটি চাঙ্গা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। নতুন কমিটি দেওয়ার পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে গতি ফিরে এসেছে। তারা মনে করছেন, নতুন নেতৃত্ব ঢাকাসহ মহানগর,ক্যাম্পাসগুলোয় কমিটি দেওয়া, প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা ও নেতাকর্মীদের গতিশীল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এছাড়া দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারবেন তারা। যার মাধ্যমে নতুন নেতা সৃষ্টি হবে।
একাধিক ছাত্রদল নেতা বলেছেন, যেহেতু বর্তমান কমিটির নেতারা আগের কমিটি ছিলেন, তাই ওই কমিটির কী কী ব্যর্থতা আছে, তা তাদের জানা। তাই নতুন কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে তাদের খুব একটা ভাবতে হবে না। বিএনপি নেতারাও ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী। তারা বলছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আগামীতে যেকোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নতুন কমিটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।