নীলফামারীর কুন্দপুকুর ইউনিয়নের কুন্দপুকুর মাজারের কবরস্থান থেকে এক রাতে ১৬টি কবরের কঙ্কাল চুরির অভিযোগ করেছেন মাজারের খাদেমসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
চাঞ্চল্যকর এ চুরির ঘটনা গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটেছে বলে জানিয়েছে তারা। তবে বুধবার ফজরের নামাজের সময় মাজার মসজিদের মুসল্লিদের নজরে এলে ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ একটি চোরের দল গভীর রাতে ১৬টি কবর খুঁড়ে কঙ্কাল চুরি করে নিয়ে যায়। এ সময় কবরগুলোতে দাফনের কাপড় পাওয়া গেলেও কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসে। চুরি হওয়া কঙ্কালের লাশের কবর এক থেকে দুই বছর আগে দেওয়া হয়েছিল। কিছু কবর খোলা থাকলেও পরে মাটি দিয়ে ঢেকে দেয় স্থানীয়রা।
ওই ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের আশরাফুল হক বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে কবরস্থানে এসে আমার বাবার কবরটা খোঁড়া দেখতে পাই। প্রথমে ধারণা করেছিলাম শেয়াল কুকুর খুঁড়েছে। পরে দেখতে পাই বেশ কয়েকটা কবরের একই অবস্থা। খবর পেয়ে, অনেকেই ছুটে এসে দেখেন এমন ১৬টি কবর খোঁড়া হয়েছে।’
নীলফামারী পৌরসভার দক্ষিণ হারোয়া গ্রামের মো. ফারুক ইসলাম বলেন, ‘এক বছর আগে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে আমার ভাজিতি আরিফা মারা গেলে তাকে সেখানে দাফন করা হয়। সকালে কঙ্কাল চুরির খবর পেয়ে এসে দেখি কবরটি খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু তার কঙ্কালটি নিয়ে যায়নি। আমরা দেখার পর আবারও মাটি দিয়েছি।’
একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার বড় ভাই আজাহার আলী এবং বোন জিন্নাহ খাতুনের কবরে কঙ্কাল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চোরেরা ওই কঙ্কাল দুটি নিয়ে গেছে। ১৬টি কবরের মধ্যে ১২ বছরের একটি মেয়ের কবর খোঁড়া হলেও তার কঙ্কাল নেয়নি চোরেরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।’
কুন্দপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ঝড়-বৃষ্টি ছিল। এই সুযোগে চোরেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ এসে দেখে গেছে। মাজার কমিটির সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে কতটি কঙ্কাল চুরি হয়েছে সেটি না দেখে বলা সম্ভব না। পুলিশ তদন্ত করলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুন্দপুকুর মাজার কমিটির সভাপতি শাহিদ মাহমুদ বলেন, ‘কবর খুঁড়ে আবার তারা মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে গেছে। কয়েকটি খোলা ছিল। খোলার কারণে বিষয়টি জানা যায়। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
নীলফামারী সদর থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ‘সেখানে পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। পুলিশ যাওয়ার আগেই কবরের দাবিদাররা খোঁড়া কবরগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। কঙ্কাল চুরি গেছে- এমন কথা কেউ বলেননি। এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগও কেউ করেননি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’