বিশেষ মূল্যছাড়ের প্রলোভন! ক্যাশ অন ডেলিভারি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চোখধাঁধানো চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে টাকা দিয়েই ক্রেতার মাথায় হাত। মেসেঞ্জার ও মোবাইল নম্বর হয়ে যায় ব্লক। কখনো কখনো মানহীন পণ্য ডেলিভারি হচ্ছে। আর এ নিয়ে কথা বলতে গেলেও একই চিত্র। এক্ষেত্রে ফোন আর মেসেঞ্জার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা নিয়ে চম্পট দিচ্ছে প্রতারক চক্র। ঈদ সামনে রেখে তৎপর হয়ে উঠেছে এ প্রতারক চক্র। এর সবই হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজ খুলে। বিভিন্ন ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত পেজকে পেছনে ফেলে প্রতারণায় নেমেছে চক্রটি। নতুন নতুন ফেসবুক পেজ খুলে করছে অভিনব প্রতারণা। যারা ফাঁদে পড়ছেন, তাদের অধিকাংশই নারী ক্রেতা। কসমেটিক, শাড়ি ও থ্রিপিসসহ বিভিন্ন পণ্যের চোখধাঁধানো চমকপদ বিজ্ঞাপনের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করছে এ চক্র।
এ কারণে অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাদের। ডিবি লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি। যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। চক্রের অনেক সদস্য ঢাকার বাইরে থেকে ও পেজগুলো পরিচালনা করে থাকে। তিনি বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রতারণা বাড়ে। তবে এটা রোধ করা আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হতে হবে। সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে এমন একটি চক্র গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্র বলছে, শুধু একটি চক্র প্রতিদিন ১০০-১৫০টি প্রতারণা পার্সেল সেল করে। এভাবে চক্রটি মাসে ২০-৩০ লাখ টাকা আয় করত। গত ৫-৬ বছর ধরে চক্রটি প্রতারণার ব্যবসা করে আসছে বলে জানা যায়।
বেসরকারি টেলিভিশনে কর্মরত এমনই একজন ভুক্তভোগী মিনালা দিবা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ড্রেস ইনপ্রোটার বিডি’ নামের একটি অনলাইন পেজ থেকে একটি থ্রিপিস পছন্দ করেন। কেনার জন্য তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে অগ্রিম ১ হাজার টাকা বিকাশ করেন। এর পর তাকে বলা হয়, এ ড্রেস তাদের কালেকশনে নেই। পরে টাকা ফেরত চাইলে মেসেঞ্জার ও মোবাইল নম্বর থেকে ব্লক করে দেয়।’
তাদের প্রতারণার সত্যতা জানতে ‘ইন্ডিয়ান ড্রেস ইনপ্রোটার বিডি’ দেওয়া মোবাইল নম্বরে প্রতিবেদক একাধিকবার কল করলেও কেউ রিসিভ করেনি। তাতে পরিষ্কার এ নম্বরগুলো তারা ব্যবহার করে প্রতারণার কাজে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এসব নম্বর তো কোনো না কোনো ভোটার আইডি দিয়ে নিবন্ধন করা। সাভারে বসবাস করেন শারমিন আক্তার কণা। তিনি ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে একটি থ্রিপিস অর্ডার করেছিলেন। কিন্তু ডেলিভারি পাওয়ার পর দেখেন- তিনি যেই থ্রিপিস অর্ডার করেছিলেন, তা পাননি।
তিনি আরো বলেন, অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে তারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ শুরু করে। ফোন নম্বর ও ফেসবুক আইডি ব্লক করে দেয়। অপর ভুক্তভোগী কাজি লুৎফুল কবির ভোরের আকাশকে বলেন, সম্প্রতি উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টর বেলি কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় দাদা সুজ নামের দোকানের অনলাইন পেজ থেকে জুতা অর্ডার করেন। ক্যাশ অন ডেলিভারিতে ছিল। টাকা পাওয়ার পর ডেলিভারি না দিয়ে নানা টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে মেসেঞ্জার ও ফোন নম্বর ব্লক করে দেয়।
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট শাহ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আয়াত কালেকশন’ নামের একটি অনলাইন শপ থেকে তার পরিবার কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিক কিনতে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। টাকা পাওয়ার পর তারা মেসেঞ্জার ও মোবাইল থেকে ব্লক করে দেয়। বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ পাঠিকা ও রিপোর্টার তাহিয়া রুবাইয়াত অপোলা। সময়ের স্বল্পতায় অনলাইন থেকেই কেনাকাটা করে থাকেন। ঠিক আগের মতোই ‘পূর্ণাঙ্গীনি’ নামের একটি পেজ থেকে ২ হাজার টাকা দিয়ে একটি শাড়ি অর্ডার করেছিলেন।
ডিবি পুলিশের তথ্য মতে, ঈদ সামনে রেখে এ চক্র আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজধানীসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এ চক্রের সদস্যরা। শুধু একটি চক্র ২০ থেকে ৩০টি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন পণ্যসহ শাড়ি ও থ্রিপিসের চটকদার বিজ্ঞাপন দিত। এসব বিজ্ঞাপনে বিশাল মূল্যছাড়ের ঘোষণাও করত তারা। সম্প্রতি এমন একটি চক্রকে গ্রেপ্তারের পরে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ বলেন, আমরা তাদের ২১টি ফেসবুক পেজের সন্ধান পেয়েছি। যার মাধ্যমে তারা প্রতারণা করত। চক্রের অনেক সদস্য ঢাকার বাহিরে থেকে ও পেজগুলো পরিচালনা করে থাকেন।