logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৪২
দুই বছর পর এবার সাড়ম্বরে ঈদ
* নেই কোনো বিধিনিষেধ * পরিবার-পরিজন সবাই মিলে একসঙ্গে ঈদ পালন এবার * খোলা ময়দান ও ঈদগাহে জামাতের প্রস্তুতি
শাহীন রহমান

দুই বছর পর এবার সাড়ম্বরে ঈদ

ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে রাজধানীর শপিংমলগুলোয় ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। ছবিটি গতকাল শনিবার বসুন্ধরা মার্কেট থেকে তোলা। ভোরের আকাশ

করোনার কারণে বিগত দুই বছরে ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন করেছে দেশবাসী। বন্দি জীবনেই মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে হয়েছে। ফলে ঈদে খুশির আমেজ ছিল না। সেই পরিস্থিতি আর নেই। ঈদ উদযাপনের সেই চিরচেনা পরিবেশ ফিরছে এবার। পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে উৎসব পালনে আর কোনো বাধা নেই। নেই কোনো বিধিনিষেধ। করোনাকাল পেরিয়ে এবার উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে ঈদ পালন করতে যাচ্ছে দেশবাসী। যেখানে ঈদের আনন্দ ঘরোয়া পরিবেশে বন্দি থাকছে না। ঈদগাহে বা খোলা জায়গায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। নামাজ শেষে কোলাকুলির সেই চিরচেনা দৃশ্যের দেখা মিলবে। থাকবে প্রিজনের সান্নিধ্য।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে মতো বাংলাদেশেও করোনা প্রভাব প্রভাব কমে এসেছে। সব ধরনের শঙ্কা ভয়ভীতি কমেছে। লকডাউনকাল পেরিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ধারায় ফিরেছে অনেক আগেই। যার প্রভাব ছিল এবারের রমজানে। রমজানের শুরুতেই সবাই মিলে একসঙ্গে ঈফতারি করেছেন। মার্কেটে, দোকার বিপণিবিতানে কোনাকাটাও চলছে পুরোদমে। আবার শুরু হচ্ছে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা। দূরপাল্লার বাসগুলোর অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে। ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহে চিরচেনা পরিবেশে ফিরছে কমলাপুর স্টেশন। নৌপথে ঈদযাত্রার জন্য প্রস্তুত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।

ঈদে শুধু নাড়ির টানের ঘরে ফেরা নয়। রাজধানীতে ঈদ উদযাপনের পূর্ণ প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফিরছে খোলা পরিবেশে এরবং ঈদগাহে ঈদের জামাতও। প্রস্তুত হচ্ছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। বায়তুল মোকাররম মসজিদের এবার পাঁচটি ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় চারটি করে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সারা দেশেও সাড়ম্বরের ঈদ উদযাপনের সব ধরনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যা করোনাকালে একেবারেই উধাও ছিল।

মুসলিম ধর্মীয় সসম্প্রদায়ে অন্যতম বড় উৎসব হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। একমাস সিয়াম সাধনা শেষে আসে খুশির এই উৎসব। যেখানে পরিবার-পরিজন, শিশু বৃদ্ধ, ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়। ঈদে সবার অংশগ্রহণের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। বড়দের কাছ থেকে ছোটদের ঈদ সেলামি, দলবেঁধে ঘুরতে বের হওয়া সব পরিচিত সংস্কৃতি করোনার কারণে উধাও হতে বসেছিল।

শুধু তাই নয় ঈদের জামাত শেষে কোলাকুলির দৃশ্য বিধি নিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়েছিল। সব বিধিনিষে উঠে যাওয়ায় এবার সবাইকে এক সেতুবন্ধনে মেলাবে ঈদুল ফিতর। প্রতি বছরের মতো এবার ঈদের প্রধান জামাতও হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়াদানে। ইতোমধ্যে প্রধান জামাতের জন্য এই ময়দার প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের নামাজের প্রধান জামাত রাজধানীর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। সম্প্রতি ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এরই মধ্যে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্যান্ডেল নির্মাণের প্রায় অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। ২৫ রোজার মধ্যেই পুরো মাঠ প্রস্তুত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এলাকাজুড়ে প্যান্ডেল তৈরির জন্য পুরো মাঠ বাঁশ দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এরপর ত্রিপল দিয়ে পুরো মাঠ ঢেকে দেওয়া হবে। এ ছাড়া অজুখানা স্থাপন, ঈদগাহের মিনার রং করার কাজ চলছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, আগামী ২৫ রোজার মধ্যে আশা করি মাঠ সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও কূটনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা জাতীয় ঈদগাহে ঈদ জামাতে অংশ নেন।

করোনায় বিভিন্ন বিধিনিষেধে দুই বছর ঈদগাহে নামাজ আদায় বন্ধ ছিল। উন্মুক্ত স্থানে জনসমাগম না করার নির্দেশনা থাকায় এখানে জামাত আদায় হয়নি। সে বছরগুলোতে মসজিদে সময় ভাগ করে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার মহামারির সে শঙ্কা কাটিয়ে ঈদগাহ ময়দানে জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন মুসল্লিরা।

এদিকে রমজান শেষে হয়ে আসায় রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে তৈরি করা হচ্ছে তোরণ। রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতির সংগঠনের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার টানাতেও দেখা গেছে। ঈদকার্ডের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু হয়েছে।

হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয়। তবে কোনো অবস্থাতেই রমজান মাস ৩০ দিনের বেশি দীর্ঘ হবে না। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা (পুরস্কার রজনি) এবং চলতি ভাষায় চাঁদরাত বা (চান রাইত) বলা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদ পালন করা হয়ে থাকে। ইসলামি বিধান মতে, ঈদের আগে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম। আর কয়েকদিন পরেই সেই কাঙ্ক্ষিত ঈদ উদযাপনের প্রতীক্ষায় দেশবাসী।