logo
আপডেট : ২৪ এপ্রিল, ২০২২ ১১:১০
আরশাদ ওয়ারসিতে পাঞ্জাবি বানাতে ভিআইপিদের ভিড়
* বঙ্গবন্ধু, ভাসানী, এরশাদ, জিয়াসহ বরেণ্য রাজনৈতিক নেতারাও এখানের পাঞ্জাবি পরেছেন
শিপংকর শীল

আরশাদ ওয়ারসিতে পাঞ্জাবি বানাতে ভিআইপিদের ভিড়

এবারের ঈদ উপলক্ষেও এখানে অর্ডার দিয়েছেন এলিট শ্রেণির দেশের বিভিন্ন লোকজন। ছবি- ভোরের আকাশ

পুরান ঢাকার বনগ্রাম রোডের মোহাম্মদ আরশাদ ওয়ারসিতে পাঞ্জাবির অর্ডার দিতে এখন উপচেপড়া ভিড়। এক সময়ে দেশে এবং দেশের বাইরের রাজনৈতিক নেতা, বিদেশি মন্ত্রী, এমপি, রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন সেক্টরের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এখানে পাঞ্জাবি বানাতেন। সময়ের কারণে এখন বিদেশি অর্ডার না এলেও দেশের ভিআইপি ব্যক্তিদের পাঞ্জাবি বানানোর প্রথম পছন্দের জায়গা এস এ ওয়ারসি।

এবারের ঈদ উপলক্ষেও এখানে অর্ডার দিয়েছেন এলিট শ্রেণির দেশের বিভিন্ন লোকজন। প্রতিষ্ঠানের লোকজন জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে তিন শাতাধিক পাঞ্চাবির অর্ডার নেওয়া হয়েছে। কাজের চাপ থাকায় এখন আর অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। এই দোকানে অর্ডারকৃত পাঞ্জাবির সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য ৫০০, সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা।

ঢাকায় নামিদামি অনেক টেইলার্সের দোকান রয়েছে। কিন্তু আরশাদ ওয়ারসির নাম-ডাক পাকিস্তান আমল থেকেই। কাজের মান ভালো থাকায় এখানে দেশের ও বিদেশের খ্যাতিমান লোকজন সব সময় পাঞ্জাবি বানাতেন। তাই অনেকে এখনো এখানেই পাঞ্জাবির বানাতে ভিড় জমান।

শুধু বাংলাদেশের নয় সে সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এখানে পাঞ্জাবি বানাতেন। তার একমাত্র কারণ হলো তাদের কাজের নিপুণতা। কাস্টমাররা যেভাবে চান, তারা সেভাবে বানিয়ে দিতে পারেন।

১৯৪২ সালে পুরান ঢাকার বনগ্রামে রোডে এটি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতের পাঠনা থেকে আগত সাব্বান খান ওয়ারসি। পাকিস্তান আমল থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়।

১৯৯০ সালে সাব্বান খান ওয়ারসি মারা যাওয়ার পর এ দোকানের হাল ধরেন সাব্বান খানের মেয়ের ঘরের নাতি আরশাদ ওয়ারসি। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে এ দোকানের হাল ধরেন। এখন তিনি এ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

এর ইতিহাস জানতে চাইলে আরশাদ ওয়ারসি বলেন, ১৯৯০ সালে আমার নানা মারা যাওয়ার পর মামাদের সঙ্গে আমি এ দোকানের হাল ধরি। এটা মূলত নানার প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনি বলেন, দাদার মুখ থেকে শুনেছি এই দোকান থেকে তখনকার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পাঞ্জাবি আমার নানা বানিয়েছেন। এছাড়া দেশের বাইরে আজমির শরিফের প্রধান খাদেম ফারুকের পাঞ্জাবি এখানে বানানো হয়েছিল।

তিনি বলেন, নানার মুখে শোনা কথা তখনকার ভারত ও পাকিস্তানের বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতার পাঞ্জাবি এখানে বানানো হত যাদের অধিকাংশের নাম আমার জানা নেই।

আরশাদ ওয়ারসি বলেন, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লার পাঞ্জাবি আমি বানিয়েছি, এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম মুরাদ, আবু আহমেদ মন্নাফি, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ অনেকের।

মো. আবদুর রাজ্জাক বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া। স্বাধীনতার পর থেকে কাজ করেন সাব্বান খান ওয়ারসিতে। তিনি একজন কাটিং মাস্টার। তিনি বলেন, এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঞ্জাবি বানানো হয়েছিল। শুধু তিনি নন সে সময় বিখ্যাত ব্যক্তিরা পাঞ্জাবি বানাতে দিতেন। বর্তমানে এখানে পাঞ্জাবি বানাতে হলে অনেক আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়। আর ডেলিভারি দেওয়া হয় এক মাস পরে।

রফিকুল ইসলাম গত ৪ বছর ধরে আরশাদ ওয়ারসিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, এখানে কোন সাধারণ মানুষ পাঞ্জাবি বানান না। প্রতিষ্ঠিত লোকেরা এখানে পাঞ্জাবি বানান।

এখানে প্রথম রোজার আগে থেকে পাঞ্জাবির অডার নেওয়া বন্ধ। এছাড়া শবেবরাতের আগ থেকে অর্ডার বন্ধের আভাস দেওয়া হয়। অন্য দোকানে আজকে দিলে কাল ডেলিভারি দেওয়া হয়। এখানে সেটা দেওয়া হয় ২৫ থেকে ৪০ দিন পর।