ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে কমলাপুর রেলস্টেশনে যখন হাজারো মানুষের দীর্ঘ লাইন তখন বাইরে তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রির বেশি। মানুষের ভিড়ে তাপমাত্রা আরো বাড়ে। প্রশান্তির জন্য কাউন্টারের সামনে ফ্যান থাকলেও এর বাইরে বাতাসের কোনো ব্যবস্থা ছিল। এমন দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে টিকিট কাটতে রাত-দিন যুদ্ধ করেছেন বাড়ি ফেরা মানুষ। কেউ পেয়েছেন, কেউ পাননি। সোনার হরিণ টিকিট হাতে পেয়ে মুখভরা হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকে।
ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিনেও নানা ভোগান্তি ও টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, এসি ও কেবিনের টিকিট পাওয়ার নজির একেবারেই নেই। কাউন্টার চালুর সঙ্গে সঙ্গেই বলা হয়েছে এসির টিকিট না থাকার। সেইসঙ্গে অনলাইনে টিকিট কাটতে না পারারও বিস্তর অভিযোগ অনেকের। যদি রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, জাতীয় পরিচয় নিশ্চিত করে টিকিট বিক্রি করতে গিয়ে বিলম্ব হয়েছে।
এগিকে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের আশঙ্কায় ইতোমধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন নগরীর মানুষ। রোববার নৌ সড়ক ও রেলপথে বাড়ি ফেরা মানুষের বাড়তি চাপ লক্ষ করা গেছে। যাত্রীরা জানিয়েছেন, কাজ না থাকায় তারা একটু আগে ভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন। ছুটি কাটিয়ে আসবেন ঈদের পর।
রোববার সকাল ৮টা থেকে ২৮ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, রেলের ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রথম দিন ২৩ এপ্রিল যে পরিমাণ মানুষের ভিড় ছিল, গতকাল (২৪ এপ্রিল) কমলাপুর স্টেশনে তার চেয়েও দ্বিগুণ ভিড়। টিকিট দেওয়া কার্যক্রম চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। একযোগে ১৮টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি চলে। দুটি কাউন্টারে নারী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। তবে টিকিটের জন্য ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে লাইনে দাঁড়ান অনেকে।
ঢাবির শহীদুল্লাহ হলের ছাত্র নয়ন বলেন, রাত ৩টার পর আরেক বন্ধুসহ টিকিটের জন্য এসেছেন। টিকিটের লাইন দিয়ে স্টেশনের পাশেই সাহরি খেয়েছেন। সাড়ে ১০টায় টিকিট পেয়েছেন।
আহাম্মদবাগের বাসিন্দা কমল বলেন, শনিবার ইফতারের পর এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি। গরম আর মশার সঙ্গে যুদ্ধ করে রাত কেটেছে। সকালে কাউন্টার খোলার পর টিকিট হাতে পেলাম। তবে এসি কেবিন বা চেয়ার পাইনি। আমার একটি প্রশ্ন রেখে গেলাম, এত টিকিট যায় কোথায়? আমার আশপাশে যারা ছিলেন তাদের কেউ এসি টিকিট পায়নি।
রামপুরার বাসিন্দা শিমুল মিয়া যাবেন চুয়াডাঙা। তিনি বলেন, দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে যখন গেলাম, তখন ওনারা বলেন, এসির টিকিট নেই। পরে শোভন চেয়ার টিকিট নিয়েছি।
আরেক যাত্রী মিলন যাবেন যশোর। তিনি বলেন, সুন্দরবন এক্সপ্রেসের টিকিট পেয়েছি। তবে টিকিট পেতে লাইনে থাকতে হয়েছে ৭ ঘণ্টার মতো। এসি টিকিট পাইনি, শুধু শোভনের টিকিট পেয়েছি।
রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ এপ্রিলের টিকিট ২৫ এপ্রিল (সোমবার), ৩০ এপ্রিলের টিকিট ২৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) এবং ১ মের টিকিট ২৭ এপ্রিল (বুধবার) বিক্রি করা হবে।
কমলাপুর রেলস্টেশনসহ মোট পাঁচটি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে পশ্চিমাঞ্চলগামী ও খুলনাগামী স্পেশাল ট্রেনের টিকিট, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে ময়মনসিংহ, জামালপুরগামী ও দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালসহ সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেওয়া হচ্ছে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরোনো রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
ঈদুল ফিতর পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে আগেভাগেই রাজধানীর ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে অনেকে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। এবার করোনার প্রভাব না থাকায় সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ পাচ্ছেন। এজন্য রাজধানীর কমলাপুর ও গাবতলীসহ মহাখালী টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
রাজধানীর কল্যাণপুর, মহাখালী, সদরঘাট, টেকনিক্যাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে খুলনাগামী পিন্টু নামের এক যাত্রী বলেন, গত দুই বছর পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে না পারায় এবার আগেভাগেই ঢাকা ছাড়ছি। এ বছর করোনা মহামারি না থাকায় আমরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারব। গত দুটি বছর আমরা এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। এ বছর অবশ্য স্বস্তি ফিরেছে।
তিনি বলেন, রাজধানীজুড়ে শুধুই যানজট। আমার আজিমপুর থেকে এখানে আসতে লেগেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। ঈদের ছুটি না দিতেই শহরে যে পরিমাণ যানজট, ছুটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর তীব্রতা আরো প্রকট হবে।