জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে টানা ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তিস্তা পাড়ের কৃষকের ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এখন নদীর পানি যতই বাড়ছে, কৃষকের কাঁধে ততই ঋণের বোঝা বাড়ছে।ফলে আগামীতে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে তিস্তা পাড়ের কৃষকদের।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খা গ্রামের তিস্তার চরে শত শত কৃষক লাখ লাখ টাকা ধার-দেনা আর সম্পদ ব্যয় করে পটল, ঝিঙা, মরিচ, করলা, শসা, চিচিঙ্গা এবং শাক-সবজি আবাদ করেছেন। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টিতে পানি বাড়ার কারণে এসব ফসলের পচা গন্ধে তিস্তা পাড়ে যাওয়াই মুশকিল।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় এক হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ ও এক লাখ ১৬ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৮০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ ও ২৭৫ হেক্টর জমির বোরো আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে।
মূলত চৈত্র থেকে বৈশাখ অসময়ে বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চরাঞ্চলের আবাদকৃত বাদাম, বোরো ধান, পেঁয়াজ, কালজিরা, ধনিয়া, পালং শাকের বীজ, মিষ্টি কুমড়া গাছসহ ফসলি জমি ডুবে গেছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফসলহানি হওয়ায় মারাত্মক আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন তারা। এই রোজায় সন্তান, পরিবার নিয়ে তাদের সংসার চালানোই দায়। তার ওপর পাওনাদারের চাপে আরো বিপাকে পড়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এক হাঁটু পানিতে নেমে পচা পেঁয়াজ, রসুন, বাদাম, ধান তুলছেন কৃষকরা। অনেকে আবার গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য কাঁচা ধান কেটে নিচ্ছেন। তবে ফসল আবাদে বেশিরভাগ কৃষকই লাখ লাখ টাকা ঋণ করেছেন। এখন কীভাবে এই ঋণ পরিশোধ করবেন তা ভেবেই নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এলাকার কৃষক মনসুর আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকার ফসল বিভিন্ন জেলায় যায়। তবে এ বছরের মতো এমন অসময়ের বৃষ্টি আমরা আগে দেখিনি। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমরা কৃষকরা লোকসানে পড়লে সরকার তেমন গুরুত্ব দেয় না।’
রাজারহাটের বিদ্যানন্দ এলাকার তিস্তার অববাহিকায় পেঁয়াজ চাষ করেছেন কৃষক আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় বিঘা জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেব তা আল্লাহই ভালো জানেন।’
কুড়িগ্রামের কদমতলা এলাকার আইনুল মিয়া বলেন, ‘ধরলা নদীর অববাহিকায় প্রায় ৪ বিঘা জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু নদীর পানি প্লাবিত হয়ে প্রায় দুই বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। অসময়ে এমন পরিস্থিতি পূর্বে কখনো দেখিনি।’
সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘অসময়ের বৃষ্টিতে পানি বাড়ায় আমাদের ইউনিয়নের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।’ এজন্য জলবায়ুকে দায়ী করে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই জনপ্রতিনিধি।
কুড়িগ্রাম কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, জেলার ৫টি উপজেলায় বৃষ্টিপাত হলে ক্ষতির সম্ভাবনা আরো বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করছে কৃষি বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আউশ মৌসুমে সরকারি প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করারও আশ্বাস দেন এই কর্মকর্তা।