কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব নেওয়ার দুমাস পার হতে চলছে। কিন্তু নির্বাচনী খাতা এখনো খুলতে পারেনি। এজন্য অপক্ষো করতে হচ্ছে আরো দুমাস। জুন-জুলাইয়ে শুরু হচ্ছে নির্বাচনী কর্মযজ্ঞ। ওই সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ নির্বাচন এবং শতাধিক স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিয়ে ইসি খাতা খুলবে।
এর আগে তাদের নির্বাচনী সংলাপ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরিতে চার দফায় সংলাপ সম্পন্ন করেছে। প্রথম দফায় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে। এরপর বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে সংলাপ শেষ করে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আরো কয়েক দফায় সংলাপে বসবে তারা। সর্বশেষ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে। সংলাপে অংশ নেয়া অধিকাংশই দল নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
নতুন ইসির দায়িত্ব গ্রহণের দিনই সচিবালয় থেকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের জন্য হাতে বেশি সময় নেই বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের করণীয় নির্ধারণে এর আগে বৈঠকে বসলেও সময়মতো নির্বাচন করতে পারছে না তারা। ফলে এ সিটিতেও প্রশাসক বসতে যাচ্ছে। আবার জেলা পরিষদ নির্বাচনও সময়মতো করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই জেলা পরিষদ আইন (সংশোধন) সংসদে পাস হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল জেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রধান নির্বাহীঅ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে প্রশাসক নিয়োগের। অথচ দুটি নির্বাচনই বর্তমান ইসির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নতুন ইসির জন্য পরীক্ষা স্বরূপ।
সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের করনীয় নির্ধারণে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লা সিটি ছাড়া দেশে শতাধিক স্থানীয় সরকার পরিষদ বিশেষ করে পৌরসভায় এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও বৈঠকের এজেন্ডায় ছিল। বৈঠক শেষে ইসি সচিব হুমায়ন কবীর খোন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, হাতে সময় না থাকায় মেয়াদের মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন করতে পারছেন না। এদিকে জানা গেছে, সময়মতো নির্বাচন করতে না পারায় আগামী ১৭ মে থেকে কুমিল্লা সিটিতে প্রশাসক বসছে। এ সিটির বর্তমান জনপ্রতিনিধির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৬ মে।
একই অবস্থা জেলা পরিষেদের ক্ষেত্রেও। দেশের ৬১ নির্বাচিত জেলা পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। সেখানে ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে প্রশাসক নিয়োগের। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছে সময়মতো নির্বাচন করা সম্ভব না হলেও দ্রুতই এসব নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই সপ্তাহেই ইসির বৈঠকে কুমিল্লা সিটি এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আগামী জুনের শেষ দিকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচন জুলাই-আগস্টে করার চিন্তাভাবনা চলছে। ঈদের পরপরই এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলেও তারা জানান। ফলে নতুন ইসির নির্বাচনী খাতা খুলতে আরো প্রায় দুমাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
সিটি করপোরেশন এবং জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মেয়াদা শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। পার্বত্য তিন জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলা পরিষদে এ দিন ভোট গ্রহণ করা হয়। এ বছর জানুয়ায়ী মাসেই স্থানীয় এই সরকার পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আইন অনুযায়ী ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল। কাজী রকীব উদ্দিন কমিশনের সময় জেলা পরিষদে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিদায়ী কমিশনের সময় এটি নির্বাচনের উপযোগী হলে কে এম নুরুল হুদার কমিশন সঠিক সময়ে নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন নতুন ইসিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হচ্ছে।
এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে পরিষদগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পরিচালনার জন্য পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। এর আগে গত ৬ এপ্রিল সংসদে জেলা পরিষদ আইনের সংসধনী পাস হয়। ১৩ এপ্রিল গেজেট দেওয়া হয়েছে। এরপরই জেলা পরিষদ ভেঙে সিইও নিয়োগে দেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে জেলা প্রসাশাসক নিয়োগের। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেলা পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের চিন্তা না করে যথাসময়ে নির্বাচনের আয়োজন করাই মূল সমাধান। তাই জেলা পরিষদগুলোতে অতিসত্বর নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।