চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কেস ডকেট (তদন্তের নথিপত্র) দাখিল করার জন্য পুলিশ পরিদর্শক (অবসরপ্রাপ্ত) ফরিদ উদ্দিনকে নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। এর আগেও তাকে তদন্তের নথি জমা দিতে একই বিচারক আদেশ দিয়েছিলেন।
সোমবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন মামলার কেস ডকেট দাখিল করতে ব্যর্থ হন।
বিচারক জাকির হোসেন আবারো আগামী ১২ মে কেস ডকেট (মানচিত্র, সূচীপত্র, রাষ্ট্রপক্ষের ১৬১ ধারায় জবানবন্দীর কাজপত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র ) জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ শামসুল আলম বাদল ভোরের আকাশকে বলেন, '২০০৫ সালের ২ জুন ফরিদ উদ্দিন পিপি অফিস থেকে এ মামলার কেস ডকেট নেন। এরপর থেকে মামলার কেস ডকেট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফরিদ উদ্দিন এ মামলার কেউ না। তিনি পুলিশের ডিসিকে দেখানোর জন্য কেস ডকেট নিয়ে গিয়েছিলেন পরে আর তা ফেরত দেননি। আজও ফরিদ উদ্দিন আদালতে এসে কেস ডকেট খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। বিচারক তাকে কেস ডকেট খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের বলা হয়েছে। এ মামলার জব্দ করা মালামালও মালখানা থেকে গায়েব হয়ে গেছে। যা না পেলে বিচারকাজ ব্যাহত হবে।'
এ বিষয়ে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌশুলি আবদুল্লাহ আবুর কাছে জানতে চাইলে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তবে তিনি এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'সে কেন নিল সেটা রহস্যজনক। এটা একটা চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলাটাকে নষ্ট করার জন্য বা যারা আগ্রহী ছিল মামলাটার প্রতি, তারাই হয়তো এমন কাজটা করিয়েছে। সুতরাং এটা খুঁজে বের করা উচিত। সেখান থেকে ২০০৫ সালের ২রা জুন স্বাক্ষর করে এই ডকেট তুলে নিয়ে যান ফরিদ উদ্দিন নামের পুলিশের তৎকালীন এক কর্মকর্তা। যিনি সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কোনো কার্যক্রমেই সম্পৃক্ত ছিলেন না।'
ডকেট তুলে নেয়ার কথা স্বীকার করলেও এর আগে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে গেছেন অভিযুক্ত ফরিদ উদ্দিন। আদালতপাড়ার সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন 'এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারছি না। এতদিন আগের ঘটনা আমার মনে পরছে না। আমি এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও না।'
এদিকে, সোমবার মামলার আসামি আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নাকচ করেন।
১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এই হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, মামলাটি তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই বছরই আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত ছিল। সর্বশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে ফের মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
এ মামলার অভিযোগপত্র ভুক্ত আসামিরা হলেন-আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানে নামের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন সোহেল চৌধুরী। ওই একই প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তার স্ত্রী দিতিও।