logo
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১০:০৪
দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা
* বিভিন্ন দেশে বাড়ছে করোনা * পরামর্শক কমিটির ৬ সুপারিশ
আরিফ সাওন

দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা

করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফাইল ছবি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বাড়ছে। সেই কারণে দেশেও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সতর্ক না হলে সামনে চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা রয়েছে। সংক্রমণ রোধে সতর্ক করে ৬টি পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে অজানা রোগ শনাক্তের খবর জানানো হয়। এরপর চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা নাম দেন কোভিড-১৯। বাংলাদেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্তের খবর জানায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রথম মৃত্যুর খবর জানায় ১৮ মার্চ। এ পর্যন্ত তিনটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হয় দেশের মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সময়ে আসা দ্বিতীয় ঢেউ। অতিসংক্রমণী ওমিক্রন নিয়ে আসে তৃতীয় ঢেউ।

করোনা সংক্রমণ এখন দেশে অনেক কম। সংক্রমণ ১ শতাংশের নিচে। কোনোদিন ৩০ জন, কোনোদিন ৪০ বা ৫০ জন করে শনাক্ত হচ্ছে। সংক্রমণ দুই সংখ্যা মধ্যেই ওঠানামা করছে। মৃত্যুও বলা যায় শূন্যের কোটায়। কয়েকদিন পরপর দু-একজনের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে। এ কারণে অনেকেই মনে করছেন করোনার প্রভাব হয়তো আর পড়বে না। হয়তো আর সংক্রমণ বাড়বে না। তাই দেশের অনেক মানুষই মানছেন না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি। চলাচল করছেন মাস্ক ছাড়া; স্বাভাবিকভাবে, ঠিক করোনার আগের সময়ের মতো। রাস্তাঘাটে, অফিসে, লিফটে, বাসে বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া দেখা যায়। ঈদমার্কেটেও থাকছে না কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি। দেশে যখন জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ঠিক এ সময়ে বিশে^র বিভিন্ন দেশে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, যা উদ্বেগজনক।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, আমাদের দেশে শূন্যের কোটায় নামলেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করেত হবে। সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। কারণ এটা তো একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। তাই বিশ্বের কোনো কোনো একটা দেশে থাকা মানেই আমাদেরও ঝুঁকি থাকা। বিশে^র সব দেশে শূন্যে না আসা পর্যন্ত আমাদের উদাসীন হওয়ার সুযোগ নেই। ভাইরাস ধীরে ধীরে দুর্বল হবে। কিন্তু তাই বলে আমাদের গাফিলতি করলে চলবে না। রোববার এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের দেশে এখন যে মৃত্যু শূন্যের কোটায় আছে। এটা ধরে রাখতে হবে। পাশের দেশে কিন্তু বাড়ছে আপনারা জানেন। ভারতে করোনা বাড়ছে। আমাদের সচেতন হতে হবে। যারা আসা-যাওয়া করে সে বিষয়েও আমাদের নজর আরো বেশি করে রাখতে হবে। যাতে আমাদের দেশে বেশি করে ছড়িয়ে না পড়ে। এ বিষয়টি আমাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং বাংলাদেশে সংক্রমণের হার ভবিষ্যতে বৃদ্ধি রোধে করণীয় বিষয়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি মতামত চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রোববার রাতে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা সভাপতিত্বে ৫৭তম সভা হয়। সভায় সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে গৃহীত সুপারিশগুলো হলো- বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিম্নমুখী হলেও প্রতিবেশী দেশসহ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী, যা উদ্বেগজনক। জাতীয় কারিগরি কমিটি আশঙ্কা ব্যক্ত করে এখন থেকেই সতর্ক না হলে বাংলাদেশেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধির ও সুপারিশ করা হয়। যেসব দেশে সংক্রমণের হার বেশি, সেসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আগমণের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন প্রদান করা থাকলেও কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিশ্চিত করা এর সব বন্দরে জনগণের প্রবেশ পথে স্ক্রিনিং জোরদার করণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাজার ও কেনাকাটা এবং ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত এর সময় মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া তারাবির নামাজ ও ঈদ জামাতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সভা আয়োজন করে এ বিষয়ক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। কোভিড নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজন করে সবাইকে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সতর্কাবস্থানে থাকার সুপারিশ করা হয়। সভায় জিনোম সিকোয়েন্সিং ও সার্ভেলিয়েন্স জোরদার করারও সুপারিশ করা হয়।

গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে তার আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ০.৪৩ শতাংশ। এদিন কারো মৃত্যু হয়নি। সুস্থ হয়েছেন ২৯৯ জন। এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৫৮৩ জনের করোনায় শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১২৭ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫৯ জন। চলতি বছরের ১৫তম এপিডেমিওলজিকাল সপ্তাহের তুলনায় ১৬তম সপ্তাহে মৃত্যু বেশি হয়েছে। ১৫তম সপ্তাহে একজনের মৃত্যু হয়। ১৬তম সপ্তাহে মৃত্যু হয় তিনজনের।