আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে চেনা রূপে ফিরেছে নিউমার্কেট। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ক্রেতাদেরও পদচারণায় এখন মুখর পুরো নিউমার্কেট এলাকা। এতে স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতাদের মধ্যে। খুশি ক্রেতারাও। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ঘুরে নিউমার্কেটে এমন চিত্র দেখা যায়।
নিউমার্কেটসহ আশপাশের বিক্রেতারা বলছেন, ঈদ যত সামনে আসছে ক্রেতাদের ভিড় তত বাড়ছে, তার সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে। তারা বলেন, ঈদ পর্যন্ত এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার্থী-দোকানিদের সংঘর্ষের সময় হওয়া ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ববী ফ্যাশনের মালিক রাশেদ খান বলেন, আগের মতো মার্কেট জমে উঠেছে। দিনে দিনে বিক্রি বাড়ছে। তাতে খুবই আমরা সন্তুষ্ট। এখন আমরা দোকান বন্ধ করি রাত ১-২ টার দিকে, তখনো বিক্রি চলতে থাকে। কিছুদিন আগে ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে দোকান কবে খুলতে পারব, এ নিয়ে ভয় ছিল। এখন আর সেই ভয় নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাউছিয়া, চাঁদনীচক, নুরজাহান মার্কেট মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই। একই অবস্থা রাস্তা কিংবা ফুটপাতের। রয়েছে রাস্তায় যানবাহনের এলোমেলো পার্কিং, ভ্রাম্যমাণ দোকান ও ফুটপাতে লাগোয়া দোকানগুলোর বর্ধিতাংশের বিড়ম্বনা। জ্যামের ভেতরেই হকারদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের দামাদামির চিত্র চারিদিকে। বেচাকেনা জমে ওঠায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
আলভী ফ্যাশনের কর্ণধার মো. জুয়েল বলেন, গত বছরের তুলতায় এবারের ঈদের বেচাকেনা অনেক বেশি। দিনে দিনে লোকসমাগম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি- সব ধরনের পোশাক কিনতে আগ্রহ ক্রেতাদের। তাতে আমরাও সন্তুষ্ট।
মার্কেটের আর কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা বেশ সন্তুষ্ট এবারের বেচাকেনায়।
গাউছিয়া মার্কেটে শপিং করতে আসা সুমি আক্তার বলেন, ‘এবার ঈদ বাজারে ওড়না, হিজাব, থ্রি পিস, থান কাপড়সহ হরেক রকমের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি, তবে পণ্যের মান ভালো। মার্কেটে এসে প্রথমে ভয় লাগলেও, লোক সমাগম দেখে ভয়টা কমেছে।
নিউমার্কেট এলাকার গাউছিয়া, চাঁদনি চক, নুরজাহান মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রি-পিস, শার্ট, প্যান্ট, ওড়না, হিজাব, থান জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস, অলঙ্কারসহ সব ধরনের পোশাক মিলছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে। সঙ্গে ভিড় তরুণ-তরুণীদের। সেখানে দেখা যায়, ছেলেদের ক্যাজুয়াল শার্ট বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। রয়েছে দামি শার্টও।
এসব শার্ট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। একইভাবে জিন্স প্যান্ট ৩৫০ থেকে ৭৫০, টি-শার্ট ২৫০ থেকে ৪০০, মেয়েদের থ্রিপিস ৪৫০ থেকে এক হাজার ২০০, শাড়ি ৪৫০ থেকে এক হাজার টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। শিশুদের থ্রি-কোয়ার্টার জিন্স প্যান্ট ৩০০ টাকা, গেঞ্জির সেট ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ফ্রক ও টপস ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শাড়ি ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
তবে এ বছর দাম বেশ বাড়তি বলে অভিয়োগ করেন ক্রেতারা। ঢাকা কলেজ সংঘর্ষ ইস্যুতে দুই দিন মার্কেট বন্ধ থাকায় লোকসান পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীরা কৌশলী হয়ে এমন দাম হাঁকাচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। এ বিষয়ে কথা হয় মো. লুৎফর রহমান নামের এক ক্রেতার সঙ্গে।
তিনি বলেন ‘প্রতি বছরই নিউমার্কেট থেকে ঈদ শপিং করা হয়। কিন্তু এবার দাম বেশি দেখছি। গতবার শার্ট ৬০০ টাকায় কিনেছি এবার তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একই অবস্থা টি-শার্টগুলোর। বছরের ব্যবধানে এসব পোশাকের দাম কোনোভাবেই দ্বিগুণ হতে পারে না। ব্যাবসায়ীরা মার্কেট বন্ধ থাকার লোকসান আমাদের কাছ থেকে পোষাতে চাচ্ছেন। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। মার্কেটগুলোর ওপর কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’