logo
আপডেট : ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:০৯
ধান কাটার ‘তথ্য গোপন’ করেছে কৃষি বিভাগ
মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

ধান কাটার ‘তথ্য গোপন’ করেছে কৃষি বিভাগ

সংবাদ সম্মেলন করছে কৃষক সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন

সুনামগঞ্জে পর পর হাওর ডুবির ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করেছে কৃষক সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন।

মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে দৈনিক সুনামকণ্ঠ কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত ২ এপ্রিল থেকে শুরু করে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে জেলার ছোট বড় ৩১টি হাওর তলিয়ে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে বেশিরভাগ হাওর তলিয়ে গেছে। এতে বোরো ধান ডুবে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের পক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কাজ করছে। হাওরে এখনো অর্ধেক ধান কাঁচা অবস্থায় থাকলেও খাতাকলমে ধান কাটার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য গোপন করছে কৃষি বিভাগ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ২৪ নং পিআসির নজরখালির বাঁধ ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরের ১২০০ হেক্টর কাঁচা ধান তলিয়ে যায়। ৪ এপ্রিল ছাতক উপজেলার গোয়া-পান্ডুয়া, নাগা উন্দা, পুটিয়া ও জল্লার হাওরের ৭১ হেক্টর, একইদিন শাল্লা উপজেলায় বাঁধ উপচে বাঘার হাওরের ৪২৫ হেক্টর ধান তলিয়ে যায়। ৫ এপ্রিল নদীর পানি উপচে কৈয়ারবন্দ ও পুটিয়ার হাওরের ৪০ হেক্টর, একই দিন জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ৭৫,৭৬, ৯২, ৯৩ পিআইসির চন্দ্রসোনার থালা উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে চন্দ্র সোনার থালা হাওরের প্রায় ২ হাজার হেক্টর, একইদিন ৫৪ নং পিআইসির সোনামরল হাওর উপ প্রকল্পের বাঁধ ভেঙে ধান তলিয়ে যায়।

৬ এপ্রিল নদীর পানি উপচে শাল্লা উপজেলার গোব্বরহরি হাওরের ৪০ হেক্টর, একইদিন দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরে উপ প্রকল্পের ১৬ নং পিআইসির বৈশাখির বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এতে দিরাই উপজেলার তাড়ল, জগদল, করিমপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। ওইদিন দিরাই উপজেলার টাংনির হাওরের জারালিয়া খেয়াঘাটের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবশ করে প্রায় হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতির মুখে পড়ে। পরবর্তীতে কৃষকরা বাঁধটি মেরামত করেন।

৮ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার ফল্লিয়ারদাইড় আফার দিয়ে পানি প্রবেশ করে এরালিয়া হাওরের ১৬০০ হেক্টর এবং ওইদিন মধ্যনগর উপজেলার পাওধোয়া বাঁধ ভেঙে মুক্তারখলা হাওরের ৯৬৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। ১৭ এপ্রিল গুরমার বর্ধিত অংশ উপপ্রকল্পের ২৭নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে গুরমার হাওরের ২ হাজার হেক্টর এবং একইদিন দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা উপ-প্রকল্প ৪২ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে ১২০০ হেক্টর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার আইডরা বিল, পুরাইডরা, নউল্লা, বইশমারা, বারকুল, সিলাইন, ডাবরবিল, মরা ডাবরের ৪৮৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এছাড়াও ওইদিন নদীর পানি উপচে জগন্নাথপুর উপজেলার গলাকাটা হাওর ও শেওরারবন হাওরের ৩২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে।

২০ এপ্রিল মধ্যনগরের ইন্দরপুর বাঙ্গালভিটার বাঁধ ভেঙে রাঙ্গামাটি হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর হাপাতির হাওরের ১০০ হেক্টর, জগন্নাথপুর আহমদাবাঁধ হুন্দাবিলের ৭৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। ২১ এপ্রিল কোন্দানাল ব্রিজের পুটিয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে ছাতক ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৫০০ হেক্টর এবং ২৪ এপ্রিল শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ৮১ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে প্রায় ২০০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়।

সর্বশেষ ২৬ এপ্রিল জামালগঞ্জ উপজেলার আছানপুর ১৭ নং পিআইসির বাঁধ ভেঙে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুকেন্দু সেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক একে কুদরত পাশা, জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল।