পাবনার ইছামতী নদীর তীরে ৪টি মৌজায় থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে স্থিতাবস্থার আদেশ খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে পাবনা মধ্য শহর দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী ইছামতী নদীর পাড়ে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর কোনো বাধা রইল না। এ কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইছামতী নদী পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বেলা ১১টায় পৌর এলাকার শালগাড়িয়ায় নদীর পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে পৌর এলাকার এক কিলোমিটারে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। আরো তিন কিলোমিটার এলাকার উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। এই তিন কিলোমিটারে প্রায় পাঁচশতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।
পাবনা জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাবনা পৌরসভার সমন্বয়ে এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে ৪টি মৌজায় থাকা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে ২০২০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ৪৩ ব্যক্তি। এরপর অনিশ্চিত হয়ে পরে উদ্ধার অভিযান।
২০২১ সালে উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই সকল স্থাপনা বাদ রেখে বাকি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশাসন। পরবর্তীতে রিটের শুনানিতে নদী কমিশনকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে স্থাপনা উচ্ছেদে স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের পর নদী কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মজিবুর রহমান প্রশাসন ও সবার উপস্থিতিতে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ৪৩ ব্যক্তির দখলে থাকা জায়গাকে ইছামতী নদীর জায়গা হিসেবে মতামত দেন তিনি। নদী কমিশনের ওই প্রতিবেদনকে চ্যালেঞ্জ করে ৪৩ ব্যক্তি হাইকোর্টে আবার রিট করেন। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।
গত রোববার (২৪ এপ্রিল) বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। নদী কমিশনের পক্ষে শুনানি করেন এন. এম আহসানুল হক। অন্যদিকে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
এদিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি, পাশাপাশি রমজান মাসে এমন বসতি উচ্ছেদ করা আইন সম্মত নয় বলে দাবি দখলদারদের ।
উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে ভুক্তভোগীরা জানান, উচ্ছেদ কার্যক্রম করার আগে আইনগতভাবে তাদের কোনো নোটিশ করা হয়নি। রমজানের আগে এই ধরনের বসতি উচ্ছেদ করা আইন সম্মত নয়। আমরা আইনগত ও সরকারের কাছে সঠিক বিচার প্রত্যাশা করেছিলাম। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে আমরা বাধা দিচ্ছি না। তবে শতবছরের পৈত্রিক জমি আজ অবৈধ হয়ে গেছে। তাহলে সরকার কেন আমাদের কাছ থেকে খাজনা খারিজ নিয়েছে, জমি রেজিস্ট্রি করেছে, পৌর কর নিয়েছে? পৌরসভা কেন বাড়ি তৈরি করার অনুমোদন দিয়েছে? সরকার আমাদের কাছ থেকে জমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দিতে পারতেন। বিষয়টি দেখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি আমরা।’