নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো ১০ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। এর মধ্যে পাঁচজন কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী নাহিদ হোসেনকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। সংঘর্ষের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ঘটনার ছয় দিন পরও ১০ জনের কাউকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনাক্ত হওয়া ১০ জনের মধ্যে পাঁচজন নজরদারিতে রয়েছেন।
ডিবি সূত্র বলেছে, সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরে এবং ধারালো অস্ত্র হাতে শুধু ছাত্ররা নন, ব্যবসায়ী-দোকানকর্মী ও হকাররাও অংশ নেন। তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।
এদিকে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করায় অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সকালে নিউমার্কেট থানার ওসি শ ম কাইয়ুম মামলার বিষয়টি জানান।
তিনি বলেন, গত ২৩ এপ্রিল মামলা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সের মালিক মোহাম্মদ সুমন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ নিয়ে নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে ৫টি মামলা হলো উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে দটি মামলা করেছে। এছাড়া বাকি দুটি হত্যা মামলা হয়েছে।
গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে সংঘর্ষ চলার সময় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া পথে দুর্বৃত্তরা অ্যাম্বুলেন্সটি ভাঙচুর করে। সেসময় রোগীসহ ৬ জন আহত হন।
অন্যদিকে, নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগের মামলায় বিএনপির ১৪ নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এদিকে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যান নাহিদের পাশাপাশি পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় দোকানকর্মী মোহাম্মদ মোরসালিনকে। তাকে কারা পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছেন, এ বিষয়ে এখনো তদন্তে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি পুলিশ। হামলাকারীদেরও শনাক্ত করা যায়নি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত করা আহ্বায়ক কমিটির এক নেতার অনুসারীরা জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মোরসালিন হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, সে বিষয়ে জানতে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংঘর্ষ, ভাঙচুর সহিংসতার ঘটনায় ব্যবসায়ী-দোকানকর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, যাদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
ফারুক হোসেন বলেন, দুটি হত্যা মামলার তদন্তের পাশাপাশি সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র হাতে হামলা ও ভাঙচুরের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের শনাক্তেও কাজ করছে ডিবির একাধিক টিম। এরইমধ্যে অন্তত ১০ অস্ত্রধারীকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী। তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
ডিবি সূত্র বলেছে, সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরে এবং ধারালো অস্ত্র হাতে শুধু ছাত্ররা নন, ব্যবসায়ী-দোকানকর্মী ও হকাররাও অংশ নেন। তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাতে রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। নিউমার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের দুই কর্মীর বিতণ্ডা থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত। এর জেরে ১৯ এপ্রিল দিনভর রাজধানীর মিরপুর সড়কের নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয় বিভিন্ন বিপণিবিতানের দোকানমালিক-কর্মচারী ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে মারা গেছেন দুজন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনায় মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি।