logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ০৮:৩৪
আগেভাগেই ঈদযাত্রা
* সোয়া কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছাড়বে * নৌ পথে ৪০ লাখ, সড়কপথে ৬০ লাখের বেশি * দুর্ভোগের আশঙ্কায় আগেভাগে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে * আজ শেষ হচ্ছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি
রাজন ভট্টাচার্য

আগেভাগেই ঈদযাত্রা

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কিনতে কমলাপুর স্টেশনে ভিড়। সম্প্রতি তোলা ছবি

আগামী দুই মে ঈদ ধরে ট্রেন-বাস ও লঞ্চের টিকিট বিক্রি চলছে। আগামীকাল ২৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবারই শেষ অফিস। ২৯ ও ৩০ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার। ১ তারিখ মহান মে দিবসের ছুটি। এই হিসাবে ২৮ এপ্রিল থেকেই ঈদের ছুটি শুরু। করোনার ছোবলে গেল দুই বছর ঈদ উৎসব হয়নি। এবার সবকিছু স্বাভাবিক। তাই সোয়া কোটির বেশি মানুষ ঢাকা থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরবে। এই পরিস্থিতিতে সব পথেই ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভোগান্তি এড়াতে একটু আগেভাগেই শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর বাস-লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

মূলত যাদের জরুরি কোনো কাজ নেই তারাই ঢাকা ছাড়ছেন। একটু আগেভাগে যারা ছুটি নিতে পেরেছেন তারাও পরিবারপরিজন নিয়ে ছুটছেন বাড়ির পানে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টসগুলোতে ধাপে ধাপে ছুটির পরামর্শ দেওয়া হলেও মালিকরা নিজেদের অবস্থানে অনড়। এখন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীর কোনো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে ছুটি ঘোষণা হয়নি। ফলে গার্মেন্টস ছুটির পর একসঙ্গে সব পথেই ঘরে ফেরা মানুষের চাপে দুর্ভোগের আশঙ্কা রয়েই গেছে।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলমান। গতকালও ভোগান্তি মাথায় নিয়ে দিনভর কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করেছেন ঘরে ফেরা মানুষ। আজ বুধবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হচ্ছে। শেষ দিনে বিক্রি হবে ১ মের টিকিট। তাই সকাল ১১টায় কমলাপুর রেল স্টেশনের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করবেন রেলমন্ত্রী। এদিকে শেষ দিনের টিকিট নিতে গতকাল বিকাল থেকেই বালিশ আর চাদর নিয়ে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ আসতে এখনো এক সপ্তাহ বাকি, ছুটিও শুরু হয়নি কিন্তু ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই মানুষ ছুটছে বাড়ির টানে। দক্ষিণাঞ্চলের ‘প্রবেশদ্বার’ হিসেবে খ্যাত পাটুরিয়া দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ভিড় রোববার থেকেই বাড়তে শুরু করেছে; সৃষ্টি হয়েছে যানজটের।

পরপর তিনটি ওভারপাস খুলে দেওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক মানেই উত্তরের পথে কিছুটা হলেও যানজটের স্বস্তি ফিরেছে। তবে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের যাত্রীদের দুর্ভোগ খুব একটা কমেনি। ১২ কিলোমিটার রাস্তায় ১২ বছরের বেশি সময় ধরে দুর্ভোগ যেন এই এলাকার মানুষের নিয়তিতে রূপ নিয়েছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, গতকাল থেকেই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। তবে যাত্রীরা বাড়তি বাস ভাড়ার অভিযোগ করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

এদিকে নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা ও আশপাশের এলাকাগুলো থেকে নৌপথে ঢাকা ছাড়বে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক যাত্রী পরিবহণে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নৌযান নেই। ফলে লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি ছাদেও বহন করতে হবে। এতে বিশৃঙ্খলা ও অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার শঙ্কা তৈরি হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির ঈদপূর্ব এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ গত ২১ মার্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে ছয়টি নৌপথের ৭০টি ছোট লঞ্চ চলাচল স্থগিত রেখেছে। তাই এবার ঈদে ৪০ লাখ ঘরমুখী মানুষের নৌযাত্রার একমাত্র মাধ্যম ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল। বিলাসবহুল ও বড় আয়তনের লঞ্চ চলাচলের জন্য ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপকূলের বৈধ নৌপথের সংখ্যা ৪২ হলেও যাত্রীস্বল্পতা ও নাব্য সংকটের কারণে মাত্র ৩৩টি নৌপথ ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিদিন ৮০-৮৫টি লঞ্চ এসব নৌপথ দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়।

এদিকে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি ২০১৮-১৯ সালে ঈদে এক কোটি ১৫ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। করোনাকালেও ৬০ লাখ মানুষ ঈদযাত্রা করেছে। কিন্তু এবার প্রতিদিন ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। কিন্তু আমাদের সক্ষমতা রয়েছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ মানুষের। ১৬ লাখের ঘাটতি রয়েছে। ফলে এই চাপ কমাতে ও ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে ঈদের ছুটিকে কাজে লাগাতে হবে। শেষদিকে সবাই বাড়ি না গিয়ে ২৫ এপ্রিল থেকে যাত্রা শুরু হলে সেখানে একটা ব্যবস্থাপনা হবে বলেও মনে করেন তিনি।

ড. হাদিউজ্জামান বলেন, বর্তমানে দেশে বাসে আট লাখ, ট্রেনে এক লাখ, লঞ্চে দেড় লাখ ও মোটরযানে চার লাখ মানুষের যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। বাকি মানুষ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লঞ্চের ছাদে করে যাবে। সক্ষমতার বাইরে যখন চাহিদা চলে যাবে সড়ক ব্যবস্থাপনা তখন কোমায় চলে যাবে, ধ্বংস হয়ে যাবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহণ নেতাদের চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় বলে দাবি করে ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি ও যানজটমুক্ত করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতিবছর সড়ক ও নৌপথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রীবহন, নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকা, একজন চালককে বিশ্রামহীনভাবে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা যানবাহন চালাতে বাধ্য করা এবং অদক্ষচালক দিয়ে আনফিট যানবাহন চালানোর কারণে সড়ক ও নৌদুর্ঘটনায় প্রতিবছর ঈদে কয়েক শ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ্যে না রাখার অপরাধে শ্যামলী, ইকোনো, এনা পরিবহনকে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অভিযানে এ জরিমানা করা হয়।

অভিযান পরিচালনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার ও সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান। ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তদারকিমূলক অভিযান চালানো হয়। এ সময় শ্যামলী, ইকোনো, এনা পরিবহণের কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করা হচ্ছিল না। এ অপরাধে তিন পরিবহণের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।