logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৪২
‘শেখের বেটি বাঁইচা থাকুক হাজার বছর’
ভোরের আকাশ ডেস্ক

‘শেখের বেটি বাঁইচা থাকুক হাজার বছর’

ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র বেগম কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি নিজের ঘর হবে, জমি হবে। ছবি- সংগৃহীত

‘আমি পোলা, নাতি আর বউরে নিয়ে মাইনষের জায়গায় থাকতাম। কোনোদিন কল্পনাও করতে পারি নাই জমিসহ ইটের দালানওয়ালা একখান নতুন ঘর পামু। আমি অনেক খুশি। শেখের বেটি আমারে ঘর দিছে। বাড়ি দিছে। আল্লাহ তার ভালা করবো। আমি নামাজ পইড়া হের লাইগা দুয়া করমু। শেখের বেটি বাঁইচা থাকুক হাজার বছর’ কেঁদে কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আশি বছরের বৃদ্ধা বেগম।

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে পাকা ঘর ও জমি পেয়ে এই বৃদ্ধা অঝোরে কাঁদছিলেন। তার দুই চোখে যেন আনন্দের বান ডেকেছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র বেগম কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি নিজের ঘর হবে, জমি হবে।

কিছুদিন আগে তার নাম, ভোটার আইডি কার্ড নেওয়া হয়েছিল। আজ তার হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পাকা একটি ঘরের চাবি এবং দুই শতক জমির দলিল। নিজের নামে বাড়ি পাওয়ার আনন্দে তিনি অনবরত কেঁদে যাচ্ছিলেন।

শুধু বেগমই নন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে উপজেলার ১৯০ ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র পরিবার পেয়েছে ঘর। এ ছাড়া সারাদেশে ঘর পেয়েছেন ৩২ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন পরিবার। ঈদুল ফিতরের আগে গৃহ ও ভূমিহীন মানুষগুলোর প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আনন্দিত। তাদের চোখে মুখে তৃপ্তির আভা।

মঙ্গলবার গণভবন থেকে একটি ভার্চুয়ালিভাবে যুক্ত হয়ে সারাদেশে একযোগে তৃতীয় পর্যায়ের জমির দলিল ও নির্মাণকৃত গৃহসমূহের চাবি প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের কাছে ঘর হস্তান্তর নিয়ে জেলা প্রতিনিধিরা জানান-

চুয়াডাঙ্গা

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় জমি ও ঘর পেয়েছেন ১৫১ ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবার। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে জেলার গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে এসব দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এসব পরিবারের মাঝে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঈদ উপহার হিসেবে জমির দলিলসহ ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

তৃতীয় পর্যায়ে জেলায় ৩১৭টি ঘর দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে ১৫১টি ঘরের কাজ শেষ হওয়ায় তা হস্তান্তর করা হলো। সদর উপজেলায় ৪৯টি,আলমডাঙ্গায় ৪৩টি, দামুড়হুদায় ২৩টি ও জীবননগরে ৩৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে।

শেরপুর

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে ১৬৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে পাকা ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলার ৫০ জন উপকারভোগীর মাঝে ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করেন।

কক্সবাজার

মুজিববর্ষের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর জমি ও ঘর পেয়েছেন কক্সবাজারের ৯ উপজেলার ৮৬৭ ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় পরিবার। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে জমিসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়। এ সময় তাদের ঈদ সমাগ্রী বিতরণ করেন জেলা প্রাশাসক মো. মামুনুর রশীদ।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ২২০ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার নিজেদের নতুন ঘরে ঈদ উদযাপন করতে পারবে। তারা পেয়েছেন নতুন ঘর। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হলরুমে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উপকারভোগীদের ঘরগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের মাঝে রমজানের ইফতার সামগ্রীর একটি করে প্যাকেট বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া আলাদাভাবে দুটি পাতিল, একটি কড়াই, একটি ফ্লোরম্যাট, একটি মশারিসহ কিচেন ও অন্যান্য সামগ্রীর একটি করে প্যাকেট দেওয়া হয়।

উপজেলার ১নং জালিয়াপালং ইউনিয়নে ২৮টি, ২নং রত্নাপালং ইউনিয়নে ৩০টি, ৩নং হলদিয়াপালং ইউনিয়নে ২০টি, ৪নং রাজাপালং ইউনিয়নে ১০০টি ও ৫নং পালংখালী ইউনিয়নে ৪২টি ভূমিহীন পরিবার পেয়েছেন মুজিববর্ষের ঘর ও জমি।

নেত্রকোনা

নেত্রকোনায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পেল ৩৪৭ পরিবার। জেলার মদন উপজেলার দক্ষিণপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপকারভোগীদের মাঝে চাবি তুলে দেয় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। এ অনুষ্ঠানে মদন উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা হয়।

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলার ৪০৯ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ৮২টি, কাজিপুরে ৫০টি, রায়গঞ্জে ৭০টি, তাড়াশে ৪৫টি, উল্লাপাড়ায় ৪০টি, শাহজাদপুরে ৪০টি চৌহালীতে চারটি, বেলকুচিতে ২৫টি এবং কামারখন্দে ৫৩টি পরিবারের কাছে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়।

খুলনা

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে খুলনা জেলায় ১৪টি রূপসায়, ৬২টি তেরখাদায়, ৩৫টি দিঘলিয়ায়, চারটি ফুলতলায়, ৬৫টি ডুমুরিয়ায়, ৩৬টি পাইকগাছায় এবং দাকোপে ২০টি পরিবারের কাছে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জ

গোপালগঞ্জে তৃতীয় পর্যায়ে ৬১২টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার একটি করে ঘর ও দুই শতক জমি দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ৬১২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের হাতে জমির দলিল ও ঘরের চাবি তুলে দেন।

এ ছাড়া বগুড়ায় ৯৩০, জয়পুরহাটের ২০৬ ও পিরোজপুরের ১ হাজার ১১১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছেন।

দুই শতাংশ জায়গায় প্রতিটি ঘরে দুটি কক্ষ রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে রান্নাঘর ও শৌচাগার। প্রতিটি ঘরের চারপাশে খোলা জায়গা রয়েছে, যেখানে উপকারভোগীরা চাইলে শাকসবজি আবাদ করতে পারবেন।

ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম আবাসন প্রকল্প। সরকারি খাস জায়গা কিংবা দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০,১৯১টি ঘর এবং ২০ জুন ৫৩,৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি। তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণাধীন একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি।