logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১০:৫৭
ফুটপাতে ঈদ কেনাকাটা: সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

ফুটপাতে ঈদ কেনাকাটা: সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ

ঈদ সামনে রেখে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতেও জমজমাট কেনাবেচা। ছবি- ভোরের আকাশ

‘মায়ের দেয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই/দীন দুখিনী মা যে তোদের তার বেশি আর সাধ্য নাই’ রজনীকান্ত সেনের এই অমরবাণীর বাস্তব প্রতিফল দেখা যায় রাজধানীতে খেটে খাওয়া মানুষের ফুটপাতে কেনাকাটা দেখলে। ঈদের সময় এলে বিষয়টি আরো প্রকট হয়। বাবা-মা যতই গরিব হোক, আয় যতই কম হোক সবাই চান ঈদে আদরের সন্তানটির মুখে হাসি দেখতে। হাসি দেখতে চান পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখেও। এই জন্য ঈদ এলেই তাদের সাধ্যমত কেনাকাটা জমে ওঠে। আর এর জন্য তারা বেছে নেন ফুটপাত। যেখানে স্বল্পমূল্যে সব কেনাকটা করা যায়। সাধ্যের মধ্যেই সবটুকু সুখ খোঁজেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অন্যবারের মতো আসন্ন ঈদুল ফিতরেও জমে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাতগুলো।

আট বছরের ফুটফুটে বালক সম্রাট। থাকে নাখাল পাড়ায়। তার মা সেলিনা বেগম। মায়ের সঙ্গেই ফার্মগেইটে কেনাকাটা করতে এসেছে সম্রাট। নিজের জন্য তিনশ টাকা দিয়ে কিনেছে আকাশির রংয়ের পাঞ্জাবি। সঙ্গে নিয়েছে খয়েরি রংয়ের স্যান্ডেল। তার ব্যাগে নিজের পাঞ্জাবির রংয়ের আরো একটি জামা দেখা যায়। জানতে চাইলে সে বলে এটা আমার বোন অন্তরার। আমরা দুজন এক কালারের জামা নিয়েছি। নিজের পাশাপাশি আদরের বোনের জন্য জামা কিনতে পেরে বেজাই খুশি সম্রাট। চোখে মুখে প্রাপ্তির আনন্দ।

সেলিনা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করত। দু’বছর হয় মারা গেছে। এখন দুই বাচ্চা নিয়ে সংসারের বোঝা তার কাঁধে। জীবনের ঘানি টানতে সেলিনা এখন গৃহকর্মীর কাজ করেন। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্য দেড় হাজার টাকা খরচ করে ঈদ বাজার করেছি। আমরা গরিব মানুষ বছরে বাচ্চাদের একবারই নতুন জামা, জুতো কিনে দিতে পারি। তাই যত কষ্টই হোক তাদের কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। সবাই তো বাচ্চাদের হাসি মুখ দেখতে চায়, তাই না। নিজের জন্য কি কেনা হয়েছে জানতে চাইলে সেলিনা বেগম জানান,‘আমার জন্যি লাগবো না। বাচ্চারা কিছু পাইলেই আমার খুশি। তাছাড়া যে বাসায় কাম করি সেই খালা আম্মা থ্রি-পিস দিবো কইছে, একটা শাড়িও দিবো। শাড়িটা আমার শাশুড়ির জন্যি পাঠাবো ভাবছি।

একই বিষয়ে কথা হয় নিউমার্কেট ফুটপাতে ঈদ কেনাকাটা করতে আসা আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি পেশায় রিক্সা চালক। থাকেন রাজধানীর একটি গ্যারেজে। তার বাড়ি পঞ্চগড়। জানতে চাইলে আব্দুর রশিদ বলেন, বাড়িতে আমার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মা রয়েছে। তাদের জন্য কেনাকাটা করেছি। মা এবং স্ত্রীর জন্য এক হাজার টাকা দিয়ে শাড়ি কিনেছি। বাচ্চাদের জন্য জামা, জুতো কিনেছি। আমাদের স্থানীয় বাজারে সব পাওয়া যায়। কিন্তু ঢাকা থেকে ঈদের বাজার নিয়ে গেলে বাড়ির সবাই খুশি হবে। বিশেষ করে বাচ্চারা। তাই প্রতিবছর ঢাকা থেকে ঈদ বাজার করে নিয়ে যায়।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে ফুটপাতের দোকান থেকে কেনাকাটা করতে দেখা যায় ক্রেতাদের। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের কেনাকাটার প্রধান পছন্দ হয়ে উঠেছে রাজধানীর ফুটপাতের বাজারগুলো। ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার চোখ রাঙানি না থাকায় বিক্রি ভালোই হচ্ছে। পুলিশি কড়াকড়িও তেমন নেই। গত দুই বছরের তুলনায় এবারের বেচাকেনায় আমরা খুশি। কম দাম হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষেরা এখান থেকে কেনাকটার সুযোগ পান।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী জুড়ে রাস্তার ফুটপাতে চলছে ঈদের কেনাবেচা। এর মধ্যে মধ্যে জমে উঠেছে মতিঝিল জনতা ব্যাংকের সামনে, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল শাপলা চত্বরের চারদিকের ফুটপাত, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর-পশ্চিম গেটের সামনে, ফকিরাপুল এলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স সমিতি মার্কেট, গুলিস্তান মোড়ের চারপাশের ফুটপাত, নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কের ফুটপাত, গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন ফুটপাত, বঙ্গবাজার, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনি চকের ফুটপাতেও জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা।

জানতে চাইলে নিউমার্কেটের ফুটপাতের জুতো দোকানি রুবেল হোসেন বলেন, আমাদের দোকান ভাড়া লাগে না। লাগলেও তা সামান্য। সে কারণে আমরা কম দরে জুতো বিক্রি করতে পারি। আমাদের এখানে ভালো মানের জুতোও পাওয়া যায়। যেগুলো ভেতরের মার্কেটে উঠালে দ্বিগুণ দাম হয়ে যায়। যে কারণে এখানে নিম্ন আয়ের মানুষেরা আসেন তা নয়। অন্যরাও আসে।

ফুটপাতের দোকানগুলোতে শার্ট মিলছে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে বাচ্চাদের বাহারি রংঙের পোশাক। পাঞ্জবি মিলছে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। একই দরে মিলছে ফতুয়া। ফুটপাত থেকে শাড়ি কেনা যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। একই ভাবে থ্রি-পিস মিলছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ম্যাকসি পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। প্রকার ভেদে নারী-পুরুষ-শিশুদের জুতো পাওয়া যাচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। যে কারণে সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ দিতে এখানে ছুটে আসছেন স্বল্প আয়ের স্বপ্ন বিলাসি মানুষেরা।