logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১১:৪৬
করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা
স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি
নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের উল্লম্ফন শুরু হয়েছে। আবারো পাখা মেলছে কোভিড-১৯। বিশেষজ্ঞরা ‘ভবিষ্য’ চতুর্থ ঢেউয়ের কথা বলছেন। পুনঃপুন সতর্কবার্তা উচ্চারণ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সত্ত্বর সতর্কতা অবলম্বনপূর্বক ভাইরাসের লাগাম টানার ব্যর্থতাহেতু ভয়াবহ পরিস্থিতির পূর্বাভাস মিলছে। কেননা, খোদ চীনে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা। দেশটিতে গতকাল (২৫ এপ্রিল) কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ৫১ জনের, নতুন আক্রান্ত ২৬৮০। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান কিংবা জার্মানী কোভিডের ঊর্ধ্বমুখীতায় চিন্তার প্রহর গুনছে। ইউরোপ-আমেরিকার পরিস্থিতিও স্বস্তিকর নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও জেঁকে বসতে শুরু করেছে করোনা ভাইরাস। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশে নতুন করে কোভিড সংক্রমনের শঙ্কা সামনে এসেছে। বিশ্বের পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষজ্ঞরা নতুন ভ্যারিয়েন্টের আশঙ্কা করছেন। দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও।


নতুন করে ‘কোভিড ঢেউ’ ছড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরি করছে মূলত চীনসহ বেশ কয়েকটি দেশে করোনা সংক্রমনের বর্তমান চিত্র। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস গেল বছরের জানুয়ারির পর থেকে চীনে কোন মৃত্য ঘটায়নি! দীর্ঘসময় মৃত্যুশূন্য থাকার পর এ বছরের মার্চে দেশটিতে আবারো শুরু হয় মৃত্যু-সংক্রমণ। সাংহাই শহরে কোভিড নতুন করে ‘মহামারি’ হয়ে উঠছে। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমগুলোতে করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের যে চিত্র উঠে আসছে তাতে চিন্তিত-উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ভুলে গেলে চলবে না, নতুন করে কোভিডের কবলে পতিত দেশগুলো করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যাপক ও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি বজায় রেখে আসছিল; এতসবের পরও রুখতে পারেনি তাণ্ডব। স্বভাবতই তাই অপক্ষোকৃত কম সতর্ক দেশ কিংবা অঞ্চলে করোনা মহামারি নতুন করে ‘প্রকোপ’ ছড়াবে- পূর্বাভাস সেরকমটাই।


বাংলাদেশের জনগণ করোনা ভাইরাসকে ভুলতে বসেছে; পরিবেশ-পরিস্থিতি সেটাই প্রমাণ করে। কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। দৈনিক মৃত্য-সংক্রমণ সহনীয় পর্যায়ে থাকায় কোভিড উপেক্ষার চিত্র সর্বত্রই। নিয়মমাফিক মাস্ক পরিধান করা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানা লোকের সংখ্যা হাতেগোনা।


বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিত্র বিবেচনায় নিলে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এখনই সতর্ক হওয়ার অন্যথা নেই। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন একই কথা। ইতোমধ্যে সংক্রমণ রোধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা, নতুন করে করে ৬টি পরামর্শ দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।


দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়, প্রথম মৃত্যু ঘটে দশ দিন পর। এ পর্যন্ত তিনটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশের মানুষ। সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সময়ে আসা দ্বিতীয় ঢেউ। আর অতিসংক্রমণী ওমিক্রন নিয়ে আসে তৃতীয় ঢেউ। করোনা সংক্রমণ এখন দেশে অনেক কম, ১ শতাংশের নিচে। মৃত্যুও বলা যায় শূন্যের কোটায়। এসব কারণে অনেকেই মনে করছেন করোনার প্রকোপ শেষ। আর একারণে মানুষ মানছে না ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি, চলাচল করছেন ঠিক করোনার আগের সময়ের মতো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ঠিক সেই সময়ে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার করুণ চিত্র চরম উদ্বেগজনক।


বিশ্বব্যাপী করোনার নতুন প্রকোপ ও চতুর্থ ঢেউয়ের বিষয়টি আমলে নিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিতে হবে। সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে নতুন করে প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। আসন্ন ঈদে বাজার ও কেনাকাটা এবং ঘরমুখী মানুষের যাতায়াতকালে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।