রাজধানী জুড়ে অগ্রণী ব্যাংকের সার্ভার বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ধীরগতিতে টাকা লেনদেন হওয়ায় গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলতে পারছেন না, টাকা জমাও দিতে পারছেন না। এর ফলে শাখাগুলোতে ভিড় বাড়ছে ভয়ানকভাবে।
শাখা ম্যানেজাররা বলছেন, আগে থেকেই সার্ভারে সমস্যা ছিল। ঈদের লেনদেনে চাপ পড়ার কারণে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। সার্ভারের সমস্যা সমাধান না হলে টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না।
জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, গ্রাহকদের লম্বা লাইন। গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, তারা চেক জমা দিয়ে টাকা পাচ্ছেন না। টোকেন নিয়ে বসে আছেন।
কয়েকজন গ্রাহক জানান, তারা রামপুরা ও তেজগাঁও শাখাতে চেষ্টা করে টাকা লেনদেন করতে না পেরে প্রেসক্লাব শাখায় এসেছেন। কিন্তু, এখানেও একই অবস্থা। জরুরি দরকার, অথচ টাকা তুলতে পারছেন না।
এই ব্যাংকটির শাখাতে দাঁড়িয়েই রাজধানীর অন্যান্য এলাকার খবর নিচ্ছিলেন গ্রাহকরা। সেসব এলাকা থেকেও সার্ভারে সমস্যা থাকার খবর পাওয়া গেছে।
প্রেসক্লাব শাখায় চেক জমা দিয়ে টাকার অপেক্ষায় বসে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব আজগর আলী। তিনি বলেন, সকাল ১০টায় চেক জমা দিয়ে বসে আছি, টোকেন দিয়েছে। মাঝে মাঝে দু’একজন গ্রাহকের টোকেন নম্বর ধরে ডাকা হচ্ছে। কখন ডাক পাবো কে জানে! দুপুরের মধ্যে বাসায় ফেরার কথা টাকা। টাকা তুলতেও পারছি না, যেতেও পারছি না।
একই অবস্থা পুলিশের এসআই রবিউল ইসলামের। লাইনে দাঁড়িয়ে বারবার বাইরে কাউকে ফোন করে তিনি বলছিলেন, ব্যাংকের সার্ভারের সমস্যা থাকার কারণে টাকা জমা দিতে পারছে না, ফিরতে দেরি হবে।
তেজগাঁও শাখার গ্রাহক রমজান আলী অফিসের কর্মীদের বোনাসের টাকা তুলতে এসেছেন। নিজের শাখায় টাকা তুলতে না পেয়ে তিনি এসেছেন প্রেসক্লাব শাখায়। ওদিকে অফিস থেকে আসছে অব্যাহত তাড়া। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘অফিস স্টাফদের বোনাস দেওয়ার জন্য টাকা তুলতে এসেছেন। কখন কাজ শেষ হবে জানি না। ওদিকে অফিস থেকে ফাইন্যান্স ম্যানেজার এরমধ্যেই দুইবার তাগাদা দিয়েছেন। ভীষণ গ্যাঁড়াকলে আছি।’
ব্যাংকের কাউন্টারগুলোতে দাঁড়ানো নারীদের অবস্থাও ছিল বিব্রতকর। ফিরোজা খাতুন নামে এক নারী গ্রাহককে দেখা যায়, বসার জায়গার সংকটের কারণে একবার তিনি একবার দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াচ্ছেন, আরেকবার হাঁটাহাঁটি করছেন। এ রকম খবর পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন শাখা থেকে।
সার্ভার সমস্যা সমাধানের ব্যাপারো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনিা জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংক প্রেসক্লাব শাখার ম্যানেজার উপমহাব্যবস্থাপক সুধীর রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, সার্ভারের সমস্যা হলে তো কোন করণীয় নেই। তবে চেষ্টা করছি অন্য উপায়ে গ্রাহকের সমস্যার সমাধান করা যায় কিনা। অন্যান্য কাজ বন্ধ করে কর্মকর্তারা টাকা উত্তোলন ও জমাতে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, সে ব্যাপারে কাজ করছে। ব্যাংকের পুরো লেনদেন অনলাইনে। সার্ভারের সমস্যার সমাধান না হলে কোন কিছুই করার নেই। তিনি জানান, অগ্রণী ব্যাংকের এ সমস্যা পুরনো। প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেন। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঈদের আগে কেবল আগামীকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংক খোলা। বাকি একদিনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সারাদেশের সব গ্রাহকের লেনদেন মেটাতে পারবে কিনা তা নিয়ে যেমন উদ্বেগ আছে তেমনই গ্রাহকরাও ব্যাংকেই দিনের কাজের সময়টা (ওয়ার্কিং আওয়ার) পার করে দিলে বাকি কাজ কখন কাজ করবে, তা নিয়ে চিন্তিত।