logo
আপডেট : ২৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৮:১৭
‘টেস্টে ম্লান ওয়ানডের সাফল্য’
ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের আফসোস
ক্রীড়া ডেস্ক

ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের আফসোস

কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই সফরে সাফল্য যেমন আছে, আছে ব্যর্থতাও। তবে ফরম্যাট হিসেব করলে ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। আর সেটা সিরিজ জিতে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নেই সাফল্য, হারতে হয়েছে বাজেভাবে।

টেস্ট সিরিজ হারের কারণে ওয়ানডের সাফল্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। আলোচনা বেশি হয়েছে টেস্টের নাজুক অবস্থা নিয়ে। অথচ তার আগেই রচিত হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কীর্তিগাঁথা। যাদের মাটিতে জয়ের রেকর্ড ছিল না বাংলাদেশের, সেখানে সিরিজ জয়টা ছিল ভিন্ন মাত্রা। কিন্তু সেই সাফল্য আড়াল করে টেস্টের সমালোচনাটা ভালো চোখে দেখতে পারছেন না বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। তার মতে, আমরা ছোট সাফল্যেও অনেক বিষয় বেশি উদ্বেলিত হই, পাশাপাশি অনেক বড় বিষয় আড়াল হয়ে যায়। ক্রিকইনফোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এসব ব্যক্ত করেছেন তামিম।

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ স্থিতিশীল একটা দল। ৩৯৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত। জয় এসেছে ১৪০টি। হার ২৪৭। টাই বা রেজাল্ট হয়নি এমন ম্যাচ নেই। সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর ৩৩৩, সর্বনিম্ন ৫৮। টেস্টে সেই তুলনায় খেলা হয়েছে কম ম্যাচ, ১৩০টি। জয় ১৬টি। হার ৯৭। ড্র হয়েছে ১৭ ম্যাচ। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ৬৩৮, সর্বনিম্ন ৪৩। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত খেলেছে ১২৫ ম্যাচ। জয় ৪৪টিতে, হার ৭৯টি। দুটি ম্যাচে রেজাল্ট হয়নি। সর্বোচ্চ স্কোর ২১৫। সর্বনিম্ন ৭০।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গেল বিশ বছরে কোনো ফরম্যাটে জয়ের রেকর্ড ছিল না বাংলাদেশের। জয় ছিল সেটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে ছিল না কোনো সুখস্মৃতি। ক্রিকেটের যে ফরম্যাটেই বলা হোক না কেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর মানে ছিল দুঃসহ। সেই বৃত্ত ভেঙে প্রথম ওয়ানডে জয়, এরপর সিরিজ জয়। তামিমদের এমন সাফল্য ছিল দেখার মতো। কিন্তু তারপরও আফসোস তামিমের মনে।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে সিরিজ জয় ছিল বিশেষ কিছু। এটা আমাদের ওয়ানডে ইতিহাসে অন্যতম সাফল্য। তবে সত্যি কথা বলতে কি, তারপরও আমার মনটা খারাপ। কারণ টেস্ট সিরিজে আমরা ভালো করতে পারি নাই। সে কারণে ম্লান হয়ে গেল ওয়ানডে সিরিজের সাফল্য। এটা মোটেও কাম্য না।’

‘আমার নিজের জন্য মন খারাপ হচ্ছে না। এমনকি সাকিব আল হাসান কিংবা মুশফিকের জন্যও। খারাপ লাগছে মেহেদী হাসান মিরাজ, ইয়াসির, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুলের জন্য। কারণ তাদের অনেক অবদান ছিল এই সিরিজে। এটা ভালোমতো উদযাপন করা দরকার ছিল।’

‘তারা খুবই পোটেনশিয়াল। এটা ধরে রাখতে পারলে দলের জন্য খুব ভালো হবে। তাসকিন, শরিফুল, লিটন ধারাবাহিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। তরুণ ইয়াসির সেও প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ খেলেছেন। এরা যদি এই ছন্দ রেখে এগিয়ে যায় তাহলে আমাদের ওডিআই টিম আরো ভালো হবে, শক্তিশালী হবে।’

প্রথম টেস্টে চারদিন লড়াই করেও বাংলাদেশ হারে বড় ব্যবধানে। ডারবানে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৫৩ রানে অল আউট হওয়াটা সমালোচনার জন্ম দেয়। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসও এমন, ৮০ রানে অল আউট। প্রশ্ন উঠাটাই স্বাভাবিক।

তামিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ইতিহাস যদি আপনি দেখেন, সেখানে সব ফরম্যাটেই আমাদের বিধ্বস্ত হওয়ার রেকর্ড আছে। ওয়ানডে সিরিজ জিতে আসলে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া প্রথম টেস্টে আমরা লড়াই করেছি বেশ। কিন্তু সেই তুলনায় দ্বিতীয় টেস্টে পারিনি। আমাদের আরো ভালো করা উচিত ছিল। আমি প্রথম টেস্টে খেলি নাই। ড্রেসিংরুম থেকে দেখেছি খেলা। চতুর্থ দিন পর্যন্তও বোঝা যায়নি আসলে ম্যাচ কোন দল জিতবে। তার মানে লড়াই হয়েছে বেশ। কিন্তু শেষ দিনে আমরা বড্ড বাজে খেলেছি, যার প্রভাব পড়েছে রেজাল্টে।’

নিজের দোষ স্বীকার করতে কার্পণ্য করছেন না তামিম। তিনি বলেন, ‘আমি অযথা অজুহাত দিতে পছন্দ করি না। আমার ভুল হলে তা স্বীকার করি অবলীলায়।’ টেস্ট সিরিজে ভরাডুবির পেছনে কিছু কারণও উল্লেখ করলেন তামিম, ‘আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করেছি। উইকেটও অনেক কঠিন ছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে। তবে এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সেই পথ বের করতে হবে আমাদের।’