থানার দেয়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে রাজধানীর কলাবাগান এলাকার তেঁতুলতলা মাঠ। মাঠের যে দিকটা খোলা আছে সেদিকে ৫ ইঞ্চি গাঁথুনির ৪ ফুট উচ্চতার দেয়াল তোলা হচ্ছে। ৪ ফুট দেওয়ালের ওপর এক ফিটের মতো ১০ ইঞ্চির ঢালাই হবে। সেই ঢালাইয়ের ওপর দেওয়া হতে পারে কাঁটাতার বা কাঁচ। যাতে করে দেয়াল ডিঙিয়ে মাঠে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তেঁতুলতলা কখনো মাঠ ছিল না, এটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল, সেজন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে থানা নির্মাণের। তিনি বলেন, কলাবাগানে একটা থানা ভবন করা প্রয়োজন। এই জায়গাটা পেয়েছি। এখন যদি মেয়র অন্য একটি জায়গা দেন সেখানে মাঠ হবে। এখানে বরাদ্দ হয়ে গেছে। এটা এখন পুলিশের সম্পত্তি। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে বৈঠক করেন পরিবেশবাদীরা। বৈঠক শেষে তারা জানান, তেঁতুলতলা মাঠের পরিবর্তে বিকল্প জায়গায় থানা নির্মাণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া দেয়াল নির্মাণ বন্ধে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে কোথাও জায়গা না পেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে থানা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল বুধবার দুপুরে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন স্থাপনের প্রতিবাদে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নিয়ে তিনি এমন প্রস্তাব দেন।
এছাড়া থানা ভবনের নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ স্থানীয়দের এবং শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশকর্মী, সাংকৃতিক কর্মী ও স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্ত থেকে না সরে এলে এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে তেঁতুলতলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজমিস্ত্রিরা। মাঠের মধ্যে আছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় পোশাক পরিহিত ২০ জনের মতো পুলিশ সদস্য দেখা যায়। সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য মাঠের মধ্যে এবং আশপাশে দেখা গেছে। মাঠের পাশে পুলিশের দুটি ভ্যান দেখা গেছে।
গতকাল সকালে দেখা যায়, ঘরের যে জায়গায় মরদেহ রেখে গোসল করানো হতো সে জায়গায় সিমেন্টের বস্তা রাখা আছে। মরদেহ গোসল করানো ঘরের সামনে বালু ও সিমেন্ট (মসলা) মেশানো হচ্ছে। এই মসলা দিয়েই চলছে ইট গাঁথুনি ও মাঠের অন্যান্য নির্মাণকাজ।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত এক রাজমিস্ত্রি বলেন, আমাদের ৪ ফিট উচ্চতার দেয়াল তুলতে বলা হয়েছে। দেয়ালের ওপর ১ ফিট সমান ১০ ইঞ্চির ঢালাই দেওয়া হবে। আজকের মধ্যে দেয়াল তোলার কাজ শেষ হতে পারে। এতে যদি সারারাত কাজ করতে হয় তাও করার নির্দেশনা আছে। তিনি জানান, দ্রুত কাজ শেষ করার তাগাদা আছে তাদের ওপর।
তেঁতুলতলা খেলার মাঠ রক্ষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না বলেন, মাঠ রক্ষার আন্দোলন এখন দেশবাসীর আন্দোলন। দেশবাসী সিদ্ধান্ত নেবেন এখন কী হবে। আমি এখনো আশাবাদী যে, এলাকাবাসীর কথা চিন্তা করে, শিশুদের কথা চিন্তা করে মাঠটি ছেড়ে দেওয়া হবে।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, যেটাকে তেঁতুলতলা মাঠ বলছেন, সেটা কখনই মাঠ ছিল না। এটা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল। ঢাকা শহরে যে নতুন নতুন থানা ভবন হচ্ছে, বেশির ভাগই ভাড়া বাড়িতে। এ কারণে পুলিশ ফোর্সকে নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সেজন্য এগুলোকে স্থায়ী জায়গায় নেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ডিসির (জেলা প্রশাসক) কাছে ঢাকা শহরের কোনো জায়গায় জমি অধিগ্রহণের জন্য বলেছিলাম। কলাবাগানের কোনো জায়গায় দেওয়া যায় কিনা, সেটাও বলেছিলাম। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে ওই জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন স্থাপনের প্রতিবাদে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে থানা ভবনের নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ স্থানীয়দের এবং শিশু-কিশোরদের ফিরিয়ে দেওয়া না হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী, পরিবেশকর্মী, সাংকৃতিক কর্মী ও স্থানীয়রা। তারা বলেছেন, সংশ্লিষ্টরা এ সিদ্ধান্ত থেকে না সরে এলে এলাকাবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এটিকে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, যারা এখানে খেলে, যারা এ মাঠের প্রকৃত মালিক তারা এখানে আছেন। তারা প্রতিবাদ করছেন, আমাদের মাঠ কেন দখল করা হচ্ছে? আমরা সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছি, সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথাবার্তা বলেছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি এখানকার স্থানীয় কয়েকজনকে কথা বলার জন্য ডেকেছেন, তারা ওখানে গেছেন।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, আপনারা কয়েকদিন ধরে দেখছেন এখানে দেয়াল তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন আন্দোলন শুরু করেন, নির্যাতনের মুখে পড়তে হয়েছে, আটক হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন কর্মসূচি পালন করছি। এতকিছুর পরও আজকে আমরা লক্ষ্য করছি এখানে দেয়াল তৈরি হচ্ছে, এর মাধ্যমে তারা এক ধরনের অপকৌশল নিচ্ছে। দেয়াল নির্মাণের মধ্য দিয়ে মাঠ ব্যবহার সীমিত হয়ে যাবে। অনতিবিলম্বে সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসুক, এটিকে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ হিসেবেই বিবেচনা হোক।
এদিকে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, আমরা স্পষ্ট বলেছি এখানে যে কাজটা হচ্ছে, আমরা চাচ্ছি দ্রুততম সময়ে তা বন্ধ করা হোক। ঈদের জামাত ওখানেই হোক, যেটা সব সময় হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তিনি আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি চেষ্টা করবেন। যেহেতু কিছু টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।