প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত চাওয়া- মুজিববর্ষে একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সে মহৎ চাওয়া বাস্তবায়িত হচ্ছে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে। দরিদ্র গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য সারাদেশে তৈরি হচ্ছে ঘর। বলা বাহুল্য ঘরগুলো ইট, বালু, সিমেন্ট, রড দিয়ে তৈরি- ‘পাকাবাড়ি’। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯টি ঘর নির্মাণের পর তৃতীয় ধাপে নির্মাণাধীন একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজহাতে এসব ঘর হস্তান্তর করছেন। এ মহতী উদ্যোগ বিপুল সংখ্যক বাস্তুহারা মানুষকে ফেরাচ্ছে মূলধারায়-মূলস্রোতে, যুক্ত করছে স্থায়ী নিবাসে, আপন ঠিকানায়।
এবারের ঈদ-উল-ফিতরের আগে ‘বিশেষ উপহার’ হিসেবে উপকারভোগীকে দুই শতক করে জমিতে ঘর প্রদান করা হলো। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং গণভবনে উপস্থিত থেকে ভার্চ্যুয়ালি নবনির্মিত বাড়ির দলিল ও চাবি তুলে দেন উপকারভোগীদের হাতে। এ ঈদ উপহার বিতরণের মধ্য দিয়ে উপকারভোগীদের চোখেমুখে ফুটে ওঠা ‘সবকিছু পাওয়ার সুখ-আনন্দ’ ছুঁয়ে গেল দেশের প্রতিটি মানুষকে। আপ্লুত প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে ধ্বণিত হয়েছে- ‘যারা ঘর পেয়েছে, তাদের মুখের হাসি আমি খুব পছন্দ করি’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি উন্নত ও সুন্দর জীবন উপহার দিয়ে জনগণের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন; সে মহৎ স্বপ্ন পূরন করছে তারই সুযোগ্য কন্যা- জাতির জন্য এ এক অনন্য পাওয়া।
মুজিববর্ষে সারাদেশে প্রতিটি ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে গৃহায়ণের আওতায় নিয়ে আসার সরকারি অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঠিকানাবিহীনদেরকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন, হতদরিদ্র ও উৎপাটিত পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে জমি ও বাড়ির মালিকানা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বেদে, তৃতীয় লিঙ্গ, চা-শ্রমিক, কুষ্ট রোগি, ভিন্নভাবে সক্ষমসহ সুবিধাবঞ্চিত সকল শ্রেণির মানুষকে সুন্দর জীবন উপহার দিতে গৃহায়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ^স্ত করেছেন। এ ঘোষণা পরমানন্দের; মাথার উপর একটি ছাদ পাওয়ার এ সংবাদ ভূমিহীনদের জন্য ‘সব থেকে বড় পাওয়া’।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে, ১৯৯৭ থেকে মার্চ, ২০২২ পর্যন্ত সময়ে মোট ৫,০৭,২৪৪ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনশীল এবং আয়বর্ধক কর্মকা-ে নিয়োজিত করার জন্য ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্রঋণ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা যেমন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সমবায়, মহিলা ও শিশু অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে বিতরণ করা হচ্ছে। এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
শুধু পুনর্বাসনই নয়, পুনর্বাসনের পর প্রকল্পকে ঘিরে পরিচালিত হয় কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড। কি নেই সে উন্নয়নযজ্ঞে! নাগরিক জীবনের সব সুবিধা ঘিরে থাকছে উপকারভোগীদেরকে। ভিজিএফ সুবিধা প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান, সমবায় সমিতি গঠন, ঋণ প্রদান, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, পুকুর খনন ও ঘাট নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, বৃক্ষরোপণ, গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এবং শিক্ষা কার্যক্রম পিছিয়ে পড়া এসব মানুষ আলোর পথ দেখাচ্ছে।
যাদের একটি ঠিকানা ছিল না, দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না, একদিনের ব্যবধানেই তাদের আশ্রয় মিলছে। ঠিকানাবিহীন পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মহত্ব-উদারতায় পাওয়া এ উপহার ভবঘুরে-ঠিকানাহীনদের জন্য যেন ‘ঈদের আগেই ঈদ’! প্রধানমন্ত্রীর এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।