সুঁই-সুতোর শিল্পীরা নতুন কাপড়ে রঙিন চক দিয়ে লাগানো দাগ দেখে দেখে চালাচ্ছেন কাঁচি। কখনো সোজাসুজি কখনো আঁকাবাঁকা। সুঁই-সুতোর সেলাইয়ে সযত্নে আনছেন তারা পোশাকের আকার। এ রকম দৃশ্য শহরের বিভিন্ন নামীদামি টেইলাইরিং শপ থেকে পাড়া-মহল্লার দর্জির দোকানে। সেলাই মেশিনের একটানা শব্দে আনন্দঘন ব্যস্ততার মাঝে নির্ঘুম সময় কাটছে মৌলভীবাজারের দর্জিপাড়ার সুঁই-সুতোর শিল্পীদের।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) শহরের বিভিন্ন দর্জি দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রোজার আগে থেকেই কমবেশি পোশাক তৈরির অর্ডার আসছে। ২০ রোজার পর অর্ডার বেড়েছে। ফলে দম ফেলার ফুরসত নেই। গুরুত্বপূর্ণ অর্ডার ছাড়া নতুন করে আর অর্ডার নেওয়া হচ্ছে না। যেগুলো আগে এসেছিল সেগুলো এখন সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ চলছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দর্জিপাড়া ব্যস্ত নানা ধরনের ঈদের পোশাক তৈরিতে। সময়ের বিবর্তনে গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারে এখন তৈরি পোশাকের ব্যবহার অনেকটা কমে গেছে। তারপরও সেলাই মেশিনের চাকা থেমে থাকেনি। অনেকেই নিজের রুচি ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য দর্জির মাধ্যমে পছন্দমতো পোশাকটি তৈরি করিয়ে নেন। ঈদ সামনে রেখে শুরু হয়েছে সব বয়সের মানুষের পোশাক তৈরির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
শহরের সেন্ট্রাল রোডের একটি টেইলার্সের মালিক আউয়াল মিয়া বলেন, ‘রোজার আগে থেকেই পোশাকের অর্ডার আসছে। কারিগররা পোশাক রেডি করে নিয়মিত ডেলিভারি দিচ্ছেন। সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারব না বলে এরই মধ্যে অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট এলাকার সুঁই-সুতোর কারিগর শফিকুল বলেন, ‘গত বছরে করোনার কারণে কাজ কম ছিল। ফলে কোনো রকম ব্যবসা হয়েছিল। তবে এবার প্রচুর অর্ডার পাচ্ছি। রাত দিন মিলে কাজ করছি।’
‘করোনার প্রকোপ থাকায় গত দুই বছরে কাজ কম ছিল। ফলে কোনো রকম ব্যবসা হয়েছিল। এবার প্রচুর অর্ডার পাব ভেবেছিলাম, কিন্তু আশানুরূপ হয়নি’, বলেন শহরের পশ্চিমবাজারের ব্যবসায়ী ও টেইলার্স হাসান আহমদ।
ব্যবসায়ী শিরিন আক্তার বলেন, সারা বছর যে পরিমাণ কাজ হয়; তার চেয়ে দুই ঈদে কাজের পরিমাণ বেশি। তবে গত দুই বছরের তুলনায় এবার অর্ডার পাচ্ছি ভালো। ঈদবাজারে একসেট সালোয়ার-কামিজের মজুরি ধরা হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
টেইলার্স মালিক সামিউর রহমান জানান, পুরুষদের অর্ডার মোটামুটি পাচ্ছি। শার্ট ও প্যান্টের অর্ডার কম। তবে পাঞ্জাবি ও পাজামার অর্ডার আছে বেশি। পুরুষদের শার্টের মজুরি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, প্যান্ট ৪৫০ টাকা, পাঞ্জাবি, পাজামা ৫০০ টাকা।
বেসরকারি চাকরিজীবী রাসেল খাঁ বলেন, ‘রেডিমেড পাঞ্জাবি ফিটিং সমস্যা হয়, তাই প্রায়ই সঠিক মাপে পছন্দের পাঞ্জাবি তৈরি করে নিই।’
তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে থ্রি-পিস বানাতে দর্জির দোকানে এসেছি। রেডিমেড জামার তুলনায় তৈরি জামা আমার ভালো লাগে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন আকার রঙের লেইস ব্যবহার করে পোশাকে পছন্দমতো ডিজাইন করা যায়।’
দর্জির দোকানে কথা হয় ছোট্ট শিক্ষার্থী সাইবা নূরের সঙ্গে। সে বলে, ‘মার্কেট থেকে পোশাক কিনলে অন্যের পোশাকের সঙ্গে মিলে যাবে। তাই নিজের পছন্দ আর চাহিদামতো অর্ডার দিয়ে পোশাক তৈরি করছি।’