logo
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:৫৯
বাসভাড়া ৭০০, নিল ১ হাজার!
রাজন ভট্টাচার্য

বাসভাড়া ৭০০, নিল ১ হাজার!

গাবতলীতে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ

প্রতিবারের মতো এবারো সড়কপথে ভাড়া-নৈরাজ্য বন্ধ করা যায়নি। যদিও বেশ কদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও টার্মিনালে নিয়মিত মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবু অপ্রতিরোধ্য পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। নানা অজুহাতে যাত্রীদের পকেট কাটছেন তারা। ২ মে ঈদ ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য অগ্রিম বাসের টিকিট বিক্রি অনেকটাই শেষ হয়েছে। এবার ঘরে ফেরার পালা।

কিন্তু যারা নানা ব্যস্ততায় টিকিট কাটতে পারননি, তাদের শেষ মূহূর্তে টিকিটের জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা বিআরটিসি বাসের টিকিটও কাউন্টারের বাইরে বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গতকাল শুক্রবারও সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবহণ মালিকদের প্রতি বাড়তি ভাড়া না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যখন এ আহ্বান জানিয়েছেন, ঠিক তখন গাবতলী এলাকায় বাড়তি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছিল।

যাত্রীরা বলছেন, অভিযোগ কার কাছে করব? কোন কর্তৃপক্ষই দৃশ্যমান নয়। এ ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রূপন নামে এক যাত্রী জানান, শুক্রবার তিনি ৩০ এপ্রিল রাত ১২টার বিআরটিসি এসি বাসের টিকিট সংগ্রহ করেছেন।

ফকিরাপুলের এফটি ট্যুরিজম অ্যান্ড রিজার্ভ বুকিং কাউন্টার থেকে তিনি টিকেট সংগ্রহ করার কথা জানান। বলেন, কাউন্টার থেকেই বলা হয়েছে ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ যেতে ভাড়া ৭০০ টাকা। রাখা হয়েছে ১ হাজার টাকা।

চার টিকিট তাকে ১ হাজার ২০০ টাকা বাড়তি গুনতে হয়েছে। প্রথমেই বাড়তি টাকা চাওয়ায় তিনি যান কমলাপুর বিআরটিসি ডিপোয়। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি কাউন্টারে নির্দিষ্ট কিছু এলাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের টিকিট চাইলে তাকে বলা হয়, কল্যাণপুর ডিপোয় যোগাযোগ করতে। সেখান থেকেই বিআরটিসির একটি বাস সুনামগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায় বলে জানানো হয়। এরপর তিনি আবারো ফকিরাপুল কাউন্টারে এসে বাড়তি টাকায় টিকিট কিনতে বাধ্য হন।

বলেন, আমার বাড়তি ১ হাজার ২০০ টাকার দায় কে নেবে? তাছাড়া বিআরটিসির টিকিট কেন ডিপোর বাইরে থেকে কিনতে হলো। যখন প্রতিষ্ঠানটি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করছে, তখন কেন এ অব্যবস্থাপনা এ প্রশ্নও রাখেন তিনি।

কেন বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে এফটি ট্যুরিজমের মালিক আরিফুর রহমান আরিফ বলেন, আমরা কমিশনে টিকিট আনি। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি টাকা না পেলে কীভাবে প্রতিষ্ঠান চালাব? কর্মচারীদের বেতন-বোনাস দেব।

বাস্তবতার প্রয়োজনে কিছু বাড়তি টাকা নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না বলেও জানান তিনি। বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন রংপুরের পীরগঞ্জের মো. ইউসুফ আলী। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে আসেন। আহাদ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে তার থেকে টিকিটের দাম রেখেছে ১ হাজার ২৫০ টাকা।

ইউসুফ আলী বলেন, বাসভাড়া ৭৭৬ টাকা। আমার কাছে নিল ১ হাজার ২৫০ টাকা। কী করব, বাড়ি তো যাওয়া লাগবে। আহাদ এন্টারপ্রাইজের সামনেই ইউসুফ আলী গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু কাউন্টার ছিল বন্ধ।

দুপুরেও দেখা যায়, কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। তবে কাউন্টারে টাঙানো ভাড়া তালিকায় দেখা যায়, ঢাকা থেকে রংপুরের ভাড়া ৭৭৬ টাকা। ইউসুফ আলী বলেন, গত ২২ এপ্রিল তার স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

শ্যামলী বাসে সেদিন তার স্ত্রী ৭০০ টাকা ভাড়া দিয়ে রংপুরে গেছেন। আজ (শুক্রবার) সেখানে আমাকে সাড়ে ৫০০ টাকা বাড়তি দিয়ে যেতে হচ্ছে। গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে শুক্রবার দেখা যায়, অন্যান্য বছরের মতো এবার ঈদে যাত্রীদের বেশি চাপ নেই।

বেশিরভাগ পরিবহণের বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টার থেকে অল্পসংখ্যক টিকিট বিক্রি হচ্ছে। সেগুলোয়ও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন যাত্রীদের অনেকে।
একটি বই বাঁধাই কারখানায় চাকরি করেন কুড়িগ্রামের কবির হোসেন।

তিনি অভিযোগ করেন, রংপুরগামী শ্যামলী পরিবহণ তার কাছে ১ হাজার ৩০০ টাকা চেয়েছে। বাড়তি টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালে আসেন কবির হোসেন। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার আগেই তিনি বাস টার্মিনালে আসেন।

এসে দেখেন, কুড়িগ্রামের হক পরিবহণের গাড়ি নেই। তারপর লোকাল বাসের খোঁজ করেন, কিন্তু পাননি। ১ হাজার ৩০০ টাকা চাওয়ায় তিনি আর শ্যামলী পরিবহণের টিকিট কেনেননি। দুপুর ১টায়ও বাস টার্মিনালে বসে থাকতে দেখা যায় কবির হোসেনকে।

তিনি বলেন, নামাজের পর দেখি একটু কম দামে টিকিট পাওয়া যায় কি না। না পাওয়া গেলে বেশি টাকা লাগলেও যাওয়া লাগবে। গাবতলী বাস টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহণের রংপুরগামী বাসের বেশকিছু টিকিট কাউন্টার রয়েছে।

একটি কাউন্টারের মাস্টার মো. নাসির বলেন, ‘আমাদের রংপুরের টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। এখন কোনো টিকিটই বিক্রি করছি না।’ ঈদযাত্রাকে সামনে গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে আসেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ সময় এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সেলফি পরিবহণ ১৫০ টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা করে নিচ্ছে। প্রশাসনের সামনে তারা এ কাজ করছে। বাস কাউন্টার থেকে বলছে, সার্জেন্টকে তারা গাড়িপ্রতি ১ হাজার টাকা ঘুষ দিচ্ছে।

জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দু-একটা ঘটনা হয়তো ঘটছে। আমাদের লোক সার্বক্ষণিক দায়িত্বে আছে। এরকম কিছু হলে আমরা অবশ্যই দেখব।’ ঈদের তিন দিনের ছুটির আগে এবার মে দিবস আর শুক্র-শনি মিলিয়ে মোট ৬ দিনের ছুটি পেয়ে গেছে মানুষ।

তাছাড়া ভোগান্তি এড়াতে অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে কারণে ছুটি শুরুর পর উপচেপড়া ভিড় আর হচ্ছে না বলে মনে করেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে যাত্রী কম থাকলেও গাবতলীতে অনেক কাউন্টারে ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছিল। পরে যাত্রীদের অভিযোগ শুনে পাঁচ কাউন্টারকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, গাবতলীর সেলফি পরিবহণকে ১ হাজার টাকা, শ্যামলী পরিবহণকে ৫০০, সাঁথী এন্টারপ্রাইজকে ১ হাজার, অরিন ট্রাভেলসকে ১ হাজার টাকা ও শ্যামনগর পরিবহণকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এখানে এসেছি। এটা মূলত বিআরটিএ’র কাজ। আমরা অ্যাডিশনাল হিসেবে এসেছি, যাতে যাত্রীর কোনো হয়রানি পোহাতে না হয়।

যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে আমরা বিভিন্ন কাউন্টারে গেছি।