logo
আপডেট : ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ১১:০৬
ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ
ঘরে বসেই তিন শিক্ষকের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন!
ইদ্রিস আলম

ঘরে বসেই তিন শিক্ষকের ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন!

ভুয়া ডক্টরেট ডিগ্রি নেয়া তিন শিক্ষক

রাতারাতি পিএইচডি ডিগ্রিধারী তারা। নেই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, নেই কোনো থিসিস; এমনকি নেই সুপারভাইজার শিক্ষক। তারপরও তারা পিএইচডিধারী, যা অর্জন করতে দেশের বাইরে কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি তাদের।

যেন ঘরে বসেই অর্জিত হয়েছে পিএইচডির মতো কঠিন এ কোর্স। এমন জালিয়াতি করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের অভিযোগ উঠেছে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিনসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একজনের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে যা যা প্রয়োজন, তার ছিটেফোঁটারও প্রমাণ মেলেনি এ জালিয়াতির ঘটনায়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পিএইচডির ভুয়া ডিগ্রিধারী জসিম উদ্দীন একা নন। তার সঙ্গে আরো দুজন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ধরনের উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার কথা বলছেন।

ভার্চুয়াল জালিয়াতির মাধ্যমে ডক্টরেট ডিগ্রিধারীর দুই শিক্ষকের মধ্যে রয়েছেন তৌফিক আজিজ ও তরুণ গাঙ্গুলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয় অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন সম্পর্কে। তারা বলেন, করোনার শুরুতে তাদের কেউ নামের সঙ্গে ‘ডক্টর’ যুক্ত করেননি।

কিন্তু করোনার পর কলেজ চালু হলে জানতে পারি- উনারা রাতারাতি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যা এ সময়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।

জানা যায়, ধানমন্ডির সেন্ট্রাল রোডের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডিয়াল কলেজ। ২০১৭ সালে কলেজটির অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন জসিম উদ্দিন আহমেদ। করোনায় যখন সবকিছু বন্ধ, তখনই জানা গেল জসিম উদ্দিন ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়ে ড. জসিম উদ্দিন বনে গেছেন।

কোথায় কীভাবে তিনি পিএইচডির মতো একটি কঠিন কোর্স শেষ করলেন- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যান জসিম উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, অনলাইনে আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। যেখানে তার সুপারভাইজার ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক।

সুপারভাইজার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলামের নাম বলেন। কিন্তু এ বিষয়ে ড. জাহিদুল ইসলাম বলছেন, জসিম উদ্দিন নামে তার কোনো পিএইচডির শিক্ষার্থীই ছিল না।

তিনি তাকে চেনেন না। তিনি আরো বলেন, আমি অনলাইনে কোনো পিএইচডি করিও না। তার থেকে বড় কথা হলো, আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কই নেই। সেখানে সে আমার কাছে কীভাবে পিএইচডি করে- প্রশ্নই আসে না।

জসিম উদ্দিনের মতো অভিনব এ ভার্চুয়াল ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন একই কলেজের ড. তৌফিক আজিজ চৌধুরী এবং ড. তরুণ গাঙ্গুলী। শিক্ষক তরুণ গাঙ্গুলীর দাবি, তার সুপারভাইজার শিক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে শিক্ষক আবুল হোসেন।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সুপারভাইজার হিসেবে উল্লেখ করা আবুল হোসেন নামে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে কোনো শিক্ষকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

পিএইচডিধারীর আরেকজন একই কলেজের আরেক শিক্ষক ড. তৌফিক আজিজ চৌধুরী। তিনিও অধ্যক্ষের সঙ্গে ড. জাহিদুল ইসলামের অধীনে পিএইচডির ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানান।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. জাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনোভাবেই এ কথা সঠিক নয়। এ কলেজের কোনো শিক্ষক আমার শিক্ষার্থী ছিল না। তারা কেন আমার কথা বলবেন। এমন অভিনব পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের বিস্তর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি নই।

আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সঙ্গে কথা বলে তারপর আপনাদের (সাংবাদিকদের) সঙ্গে কথা বলব।’ কীভাবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বললাম তো, আমি গভর্নিং বডির সঙ্গে কথা না বলে আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না বলে কেটে দেন।’

একইভাবে ভার্চুয়াল ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. তৌফিক আজিজ ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। আমি অসুস্থ।

যা জানার ঈদের পর আসেন।’ আপনারা যে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন সেই শিক্ষক আপনাদের চেনেন না, তাহলে কি করে অর্জন করলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তো অসুস্থ, এরপরও কেন এমন করছেন? ঈদের পর আসেন কথা বলব বলে তিনিও ফোন কেটে দেন।’

অপর এক পিএইচডি ডিগ্রিধারী তরুণ গাঙ্গুলী। তার কাছে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন সম্পর্কে জানতে প্রশ্ন করা হলে প্রশ্ন শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। এরপর তাকে আবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।