চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সোমবার অথবা মঙ্গলবার উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সারা দেশে এখন ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। ঈদের দিন সকালে গোসল করে সবাই প্রথম ছুটবেন ঈদগাহের পানে। ছোট বড়, ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। এ জন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ঈদগাহ ময়দান প্রস্তুত করা হয়েছে।
প্রতি বছর দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর জাতীয় ময়দানে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। তবে আবহাওয়া ভালো না থাকলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত করার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদগাহ মাঠে বাঁশ দিয়ে প্যান্ডেল করার কাজ প্রায় শেষ। বৃষ্টির শঙ্কায় প্যান্ডেলে টানানো হচ্ছে শামিয়ানা ও ত্রিপল। চারপাশেও চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ।
ঈদের নামাজে গরমে মুসল্লিরা যাতে কষ্ট না পান, সেজন্য সিলিং ফ্যান ও প্যাডেস্টাল ফ্যান বসানো হবে। এ ছাড়াও ওজুর ব্যবস্থাসহ স্থাপন করা হচ্ছে মোবাইল টয়লেট। অন্যদিকে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তায় থাকছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। চারদিকে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। নারীদের জন্যও পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল ) জাতীয় ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ সময় তিনি বলেন, করোনা মহামারি অতিক্রম করে দুই বছর পর ঢাকাবাসী যাতে আবারো জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পারেন, সেই আয়োজন আমরা সম্পন্ন করেছি। জাতীয় ঈদগাহ ময়দান সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারদিকে সাজ সাজ রব। ঈদের প্রধান জামাতের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে ঢাকাবাসী জাতীয় ঈদগাহে এসে ঈদের প্রধান জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর পর এবার প্রতি ওয়ার্ডে ঈদের জামাতের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে চারটি করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরেও রাজধানীর প্রতিটি মসজিদে একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বায়তুল মোকাররমে ৫টি জামাত : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদ-জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এসব জামাতে নিম্নোক্ত আলেমরা ইমাম ও মুকাব্বিরের দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী। তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। এতে ইমামের দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। এতে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বেলা পৌনে এগারোটায়। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা মুহিউদ্দিন কাসেম। উল্লিখিত ৫টি জামাতে কোনো ইমাম উপস্থিত না থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মাওলানা মো. আব্দুল্লাহ (মুফতী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতীয় সংসদ ভবনে ঈদের জামাত : জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। চিফ হুইপ, হুইপ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা জামাতে অংশ নেবেন। এ জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত। জামাতে সকল আগ্রহী মুসল্লিকে অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সচিবালয় থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জমিয়ায় ঈদুল ফিতরের দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন প্রফেসর ড. আ র ম আলী হায়দার এবং দ্বিতীয় জামাতের ইমামতি করবেন হাফেজ উসাইদ আহমাদ। এ ছাড়া সল্লিমুল্লাহ হল প্রধান গেট সংলগ্ন মাঠে সকাল ৮টায় এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল সাড়ে আটটায় ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।