logo
আপডেট : ১ মে, ২০২২ ১৫:২০
পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোল নিয়ে ‘হতাশ’ দক্ষিণাঞ্চলবাসী
জহির রায়হান, বরিশাল ব্যুরো

পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোল নিয়ে ‘হতাশ’ দক্ষিণাঞ্চলবাসী

ফাইল ফটো

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে বরিশাল বিভাগ তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক, অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু চালুর মধ্যদিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা সরাসরি সারা দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে।

তবে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের শুরু থেকে আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখলেও প্রস্তাবিত নির্ধারিত টোল আদায় ঘোষণা শুনে হতাশ হয়েছে গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী। কেননা পদ্মা সেতুর টোল যত বাড়বে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে তত ভাড়া নেবে পরিবহণ সেক্টর। এতে যাত্রীদের ওপর চাপ পড়বে। তাই প্রস্তাবিত টোল কমানোর দাবি জানিয়েছে ঢাকাগামী দক্ষিণাঞ্চলবাসী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা।

সেতু বিভাগ সূত্রে পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোল সম্পর্কে জানা গেছে, পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার ভাড়া ১০০ টাকা (ফেরিতে ৭০), কার/জিপ সেতুতে ৭৫০ টাকা (ফেরিতে ৫০০ ), পিকআপ সেতুতে ১২০০ টাকা (ফেরিতে ৮০০), মাইক্রোবাস সেতুতে ১৩০০ টাকা (ফেরিতে ৮৬০ ), ছোট বাস ১৪০০ টাকা (ফেরিতে ৯৫০), মাঝারি বাস সেতুতে ২০০০ টাকা (ফেরিতে ১৩৫০), বড়বাস সেতুতে ২৪০০ টাকা (ফেরিতে ১৫৮০), ছোট ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত ) ১৬০০ টাকা (ফেরিতে ১০৮০), মাঝারি ট্রাক (৫-৮ টন ) ২১০০ টাকা (ফেরিতে ১৪০০), মাঝারি ট্রাক (৮-১১ টন) ২৮০০ টাকা (ফেরিতে ১৮৫০), ট্রাক (৩ এক্সেল পর্যন্ত) ৫৫০০ টাকা (ফেরিতে ৩৯৪০ টাকা)।

সব মিলিয়ে এ প্রস্তাবিত টোল নির্ধারণ হলে বর্তমানে ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে যে টাকা লাগে, পদ্মা সেতু দিয়ে পার হতে গেলে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ টাকা বেশি গুনতে হবে পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের।

আরো জানা গেছে, টোল আদায়ের প্রস্তুতি নিতে চলতি মাসের শুরুর দিকে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে (এমবিইসি) চিঠি দিয়েছে সেতু বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পদ্মা সেতু চালু করার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। ১ জুলাই থেকে টোল আদায় শুরু হতে পারে। সে ভাবেই তাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব রাহিমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টোলহার নিয়ে একটা প্রস্তাব তৈরি করেছে কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য এ মাসে অথবা আগামী মাসে সারসংক্ষেপ পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন দেবে সেতু বিভাগ।’

আবু সুফিয়ান নামে ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, ‘জনকল্যাণের জন্য পদ্মা সেতু বানিয়েছে সরকার। তাই জনস্বার্থে সেতুর টোলও কমানো উচিত।’

ঢাকাগামী সাকুরা পরিবহণের ড্রাইভার আব্দুল মাকেল বিশ্বাস বলেন, ‘টোল যতই বাড়বে, তা যাত্রীদের কাছ থেকে উঠানো হবে। আর টোল কমলে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া কম উঠানো হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে যাতায়াতে সময় কম লাগবে কিন্তু টোল ভাড়া কম হলে যাত্রীদের খরচ কম হবে।’

বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কাওছার হোসেন শিপন জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো বাড়ানোর জন্য পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোল সহনশীল রাখার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা।

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রস্তাবিত টোলের কথা শুনেছি। কিন্তু কোনো চিঠি পাইনি। সেতু পারাপারের সময় রশিদ পাওয়ার পর বোঝা যাবে কত টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভাড়া কম হলে পরিবহণ বেশি চলাচল করবে। সাধারণ যাত্রীদের ওপর চাপ কমবে। ভাড়া বেশি হলে যাত্রীদের কাছ থেকেই ভাড়া তুলতে হবে। টোলের হার স্বাভাবিক থাকলে ভালো। না হলে আন্দোলন করে টোলের হার কমানোর দাবি জানাবো।’

বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াতে আমূল পরিবর্তন আসবে। কম সময়ে যাতায়াত করার কারণে যানবাহনের জ্বালানি খরচ কমে যাবে। এতে জাতীয় অর্থনীতিতেও গতি আসবে। তাই সবদিক বিবেচনা করে সেতু ও সড়কের টোল সরকার যতটা সম্ভব কম রাখবে বলে আশাবাদী তিনি।