রাজধানীসহ সারাদেশে দুই বছর পার উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। করোনা না থাকায় বর্ণিল এই উৎসবে সব ভেদাভেদ ভুলে শরিক হন সবাই। দীর্ঘদিন পর এমন পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পেরে খুশি প্রকাশের সীমা ছিল না যেন কারো।
পুরো রমজানে আবহাওয়া বৈরী থাকলেও ঈদের তিনদিনে আবহাওয়া ছিল সম্পূর্ণ অনুকূল। এই অনুকূল আবহাওয়ায় ঈদ উদযাপনে বাড়তি সুবিধা যোগ হয়। ঈদের দিন, আগে ও পরের দিন আকাশে যেমন মেঘ ছিল। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দেখাও মিলেছে। আবার কখনো রোদের দেখা মিলেছে। সব মিলিয়ে ঈদের আবহাওয়া ছিল চমৎকার।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় বন্ধ ছিল। এবার সে আয়োজন আবার সবার জন্য উন্মুক্ত হয়। এতে সবাই খুশি মনে ঈদের নামাজে হাজির হন। রাষ্ট্রপ্রধান পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
রাষ্ট্রপতি সাধারণত রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঐতিহ্যবাহী ঈদের নামাজে অংশ নেন। কিন্তু গত দুই বছরের মতো কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবারো তিনি জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে যাননি। নামাজ শেষে বঙ্গভবনে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান রাষ্ট্রপতি হামিদ।
এবারের সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। প্রধান জামাতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে জামাতে শরিক হয়। করোনা বিধিনিষেধ না থাকায় মুসল্লিরা গায়ে গা লাগিয়ে জামাতে শরিক হন। এছাড়া নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকায় তারাও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের নামাজের শরিক হন।
ঈদের দিন সকাল থেকেই আবহাওয়া ছিল সুন্দর। সকাল ১০টা পর এক পশলা বৃষ্টি হলেও এতে নামাজে বিঘœ সৃষ্টি হয়নি। বরং সারাদিন ঢাকার আবহাওয়া ছিল নির্মল। ফলে নামাজ শেষে সবাই খুশিমনে একসঙ্গে ঘোরাঘুরি এবং আনন্দ উৎসবে শরিক হতে পেরেছে। তবে ঢাকা বাইরে সকাল থেকেই ছিল মুষলধারে বৃষ্টি। অনেক জায়গায় ঈদের জামাত বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে পড়ে।
প্রধান জামাতে হাজার হাজার মুসল্লি শ্রেণি-পেশা-আর্থিক অবস্থান ভুলে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। জায়গা না পেয়ে মানুষ কদম ফোয়ারার সামনের সড়ক, হাইকোর্টের মূল গেটের সামনে, তোপখানা সড়কের একাংশে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত শুরু হয়। ঈদ জামাতের ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি রুহুল আমীন। জাতীয় ঈদগাহের ঈদের নামাজের মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি, দোয়া, দেশের মানুষের সুস্থতা কামনা করা হয়। মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে টানা গরমে প্রশান্তি পরশ বুলিয়ে যায়। ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিরা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। এছাড়াও বায়তুল মোকাররমে এবার ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর পাশাপাশি সারাদেশে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতর। সোমবার রমজান মাস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতিটির ঘরে ঘরে নেমে আসে খুশির বন্যা। অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজ নিজ ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সব ভেদাভেদ ভুলে কোলাকুলিতে মিলিত হন মুসল্লিরা। একেক অপরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ঈদের নামাজে বিশ্বশান্তি ও আখেরাতের মুক্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
ঈদের দিন প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে রান্না করা হয় সেমাই, জর্দ্দা পোলাও, কোরমা, ফিরনিসহ নানা ধরনের খাবার। শিশু-কিশোররা সকাল থেকেই আনন্দে মেতে ওঠে। সবাই নতুন জামা কাপড় পরে ঈদের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে এক অপরের শুভেচ্ছা বিনিময়, আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেন সবাই। অনেকে মৃত আত্মীয় স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন।
প্রতিবারের ন্যায় এবারো দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এবার ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে ফাঁকা ঢাকায় বেপেরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর কারণে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার ঈদে বাড়ি ফেরাও হয়েছে নির্বিঘ্নে।
পবিত্র মাহে রমজানের শুরু থেকেই সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ সময়ে রাজধানীজুড়ে ছিল অতিরিক্ত নিরাপত্ত ব্যবস্থা। রমজানে ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ছিল। ফলে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেখা যাযনি। ডাকাতি ও ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম সব সময়ই থেকেছে মাঠে। শহরের প্রবেশ ও বহির্গমন পথগুলোতে বাড়তি চেকপোস্ট ছিল।