বয়সে কিশোর। মুখে দাঁড়ি-গোঁফের রেখা ওঠেনি। কিন্ত দুরন্ত গতির প্রতি ঝোক অত্যধিক। তাই বাপ-মায়ের কাছে আবদার মটরসাইকেল কেনার। আদরের সন্তানের আবদার ফেলতে পারছেন না বাপ-মা। মনের অজান্তেই বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন প্রিয় সন্তানকে। ঈদে বা বড় উৎসব পার্বণে এমনিভাবে শখের মটরসাইকেল হাতে পেয়ে রাস্তায় বেপরোয়া হয়ে পড়ছে কিশোররা। ঝড়ছে অসংখ্যা প্রাণ। এবারের ঈদে বেপরোয়া উৎসবে শরিক হতে গিয়েও ঝড়ে একাধিক কিশোরের প্রাণ।
#বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাতে গিয়ে ঝড়ছে প্রাণ
#ফাঁকা সড়কে বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে
#অসচেতন পিতামাতা সন্তানকে ঠেলে দিচ্ছে বিপদে
পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদে ফাঁকা ঢাকায় এবং রাজধানীর বাইরের যেসব মটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে তার প্রায় সবগুলোর সঙ্গে এই কিশোররা জড়িত। পিতা-মাতার অসচেতনতার কারণে যেমন অকালে ঝড়ে পড়ছে এসব কিশোরের জীবন। তেমনি তাদের কারণে অন্যরা মৃত্যুর মুখে পাতিত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোর-তরুণ বয়সি এসব বাইকারদের কারণে সড়কে মৃত মানুষের তালিকা লম্বা হচ্ছে। বেপরোয়া গতিতে বাইক চালানোয় অকালে বাপ-মার বুক খালি করে পরপারে পাড়ি জমাচ্ছে অনেক কিশোর।
বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরি কমিশনের হিসাব মতে, এবার ঈদে রাজধানী ছেড়েছিল প্রায় ১ কোটি সিম ব্যবহারকারী। এভাবে প্রতি বছর ঈদে রাজধানী প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এই ফাঁকা সড়কে রাজত্ব শুরু হয় কিশোরদের। একসঙ্গে একাধিক বন্ধু মিলে দাপিয়ে বেড়ায় পুররো শহর জুড়ে। এ কারণে পথচারী কিংবা রাস্তা পারাপার হওয়া মানুষের জন্য রীতিমতো ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই কিশোর বাইকাররা। ফাঁকা রাস্তায় চোখের পলকে ছুটে চলে তারা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কখনো যে কার গায়ে বাইক উঠিয়ে দেয়, সেই ভয়ে ভিত পথচারীরাও।
ঈদের পরের দিন রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় বেপরোয়া গতির মটরসাইকেলে প্রাণ হারায় আবু সিদ্দিক (৫৫) নামের এক পথচারী। পুলিশ জানায়, আবু সিদ্দিককে দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান।
শুধু আবু সিদ্দিক নয়, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড়ে বেপরোয়া মটরসাইকেল গতিতে প্রাণ হারিয়েছে তিন কিশোর। জানা গেছে, নিহত কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের সাইকেলে আরোহী ছিলেন অপর দুইবন্ধু মাহবুবার রহমান ও সিয়াম ইসলাম। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, তিনবন্ধু একসঙ্গে ঘুরতে বের হন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা মটরসাইকেলে ধাক্কায় ছিটকে পড়ে প্রাণ হারায় তারা। বয়সে তিনজনই ছিল উঠতি বয়সের। পিতা-মাতার অসচেনতার কারণেই কিশোর বয়সেই তাদের জীবনের সমাপ্তি হলো। নিহত কিশোর আবু বক্কর সিদ্দিকের বাবা আব্বাস আলী মা লুৎফা বেগম ছেলে হারানোর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
ঈদের দিন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে প্রাণ যায় আরো এক কিশোর রিপনের। এই ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি তার বন্ধু আল আমিন। তাদের দুজনের বয়সই ১৫ বছরের মধ্যে। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, তারা এক মোটরসাইকেলে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের পিলারে ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিতা-মাতার অসচেতনতার কারণে এই বয়সেই তারা উঠে বসছে বাইকের সিটে। হেলমেট পরার বালাই নেই। এক একটি বাইকে তিন থেকে চার জন চড়ে সড়ক দাপাচ্ছে। এবার ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেপরোয়া ড্রাইভ করতে দেখা গেছে কিশোর বাইকারদের।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া), মো. কামরুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার। পরিবারকে ভাবতে হবে তার সন্তান সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারে কিনা। তার হাতে গাড়ির চাবি দেয়া ঠিক হবে কিনা। পিতা-মাতা সচেতন না হলে দুর্ঘটনা বাড়বে। একটি দুর্ঘটনা পুরো পরিবারের জন্য কান্না। এজন্য সচেনতার বিকল্প নেই।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ঈদের বেপরোয়া আনন্দে বাইক, সিএনজি ও অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহনে মোট ৭৩২ জন হাত-পা ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনেকের অবস্থা গুরুতর। ঈদের দিনই এই ধরনের ৩শ রোগী ভর্তি হয়েছে। অধিকাংশ রোগীই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত। এছাড়া বাজি ফুটিয়ে ফূর্তি করার সময় কিশোরদের অনেকে আহত হয়েছেন।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মাহবুব চৌধুরী বলেন, ঈদে ফাঁকা সড়ক পেয়ে অনেকে বেপরোয়া ড্রাইভ করছে। ঈদ আনন্দের পাশাপাশি সচেতনতা দরকার। নিয়ম কানুন মেনে সড়কে ড্রাইভ করা দরকার। সাবধান হয়ে বাইকের গতি ঠিক করার আহ্বান জানান তিনি।