বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আগামীকাল রোববার নাগাদ ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে পরিণত হতে পারে। এটির গতি এখন উত্তর-পশ্চিম দিকে।
দিক পরিবর্তন না করে এভাবে এগিয়ে গেলে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর তা আগামী ১০ মে ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আরও পরিপক্ব হয়ে নিম্নচাপ কিংবা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ততক্ষণ কোনো কিছুই নির্দিষ্ট নয়।
গতিপথ যে কোনো সময় যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগ। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা করে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে সরকার।
কনিবার (০৭ মে) বিকালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সানাউল হক মন্ডল ভোরের আকাশকে বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) সন্ধ্যায় লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। আজকে (শনিবার) সকালেও এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হিসেবেই রয়েছে। এটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। আজ (শনিবার) সন্ধ্যা বা সন্ধ্যার পরে কোনো এক সময় এটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আমরা এটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি। সিস্টেমটির গতি আপাতত উত্তর-পশ্চিম দিকে আছে। নিম্নচাপ হওয়ার পরও এটি উত্তর-পশ্চিম দিকেই এগোতে পারে। সে অনুযায়ী এটি উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত না এটি আরও পরিপক্ব হয়ে নিম্নচাপ কিংবা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে ততক্ষণ কোনো কিছুই নির্দিষ্ট নয়। গতিপথ যে কোনো সময় যে কোনো দিকে মোড় নিতে পারে। সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আমাদের উপকূল থেকে এখনো অনেক দূরে। তাই সমুদ্রবন্দরগুলোর জন্য এখনই কোনো সতর্ক সংকেত জারি করা হয়নি বলে জানান আবহাওয়াবিদ সানাউল হক মন্ডল।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (মৌসুম ভবন) জানিয়েছে, সিস্টেমটি রোববার (৮ মে) সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। আগামী ১০ মে ভারতের উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমূল হক বলেন, দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি শনিবার সকাল ৬টায় দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।
আগামী তিনদিনের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ।
ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি :
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর তা মোকাবেলার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় পূর্বপ্রস্তুতি বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ একটি ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশ। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে, ঝড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। যার জন্য আমরা আজ প্রাথমিক সভা ডেকেছি। এখানে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আলোচনা করেছি। কবে লঘুচাপ, কবে নিম্নচাপ সৃষ্টি হবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিটা স্টেপে আমাদের প্রস্তুতি কি, কাদের সংযুক্ত করব, কাদের দায়িত্ব দেবো, কোথায় কীভাবে নির্দেশনা দেবো সেগুলো আমরা আজ ঠিক করেছি। পরে যদি সতর্ক সংকেত দেওয়া হয় তাহলে আমরা একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে নির্দেশনাগুলো মাঠ পর্যায়ে দেবো। আমাদের সিপিপি ভলান্টিয়ারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করছে, আমাদের যে এসওডি আছে সে অনুযায়ী কখন কী করতে হবে জানিয়ে দিয়েছি। সবাই আমরা এখন অ্যালার্ট। পরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিপিপি ভলান্টিয়ারদের অবহিত করা, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহিত করা, যদি গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেল্টার সেন্টারগুলো প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের প্রায় ৭ হাজার শেল্টার হাউজ আছে, প্রয়োজনে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য ভবন কাজে লাগাবো। আম্ফানের সময় ১৪ হাজারের বেশি শেল্টার প্রস্তুত করেছিলাম। সেখানে প্রায় ২৪ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিতে পেরেছিলাম, আমাদের সেই ক্যাপাসিটিও প্রস্তুত । আশা করি এটি মোকাবিলা করতে পারব বলে জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সরকারি প্রস্তুতি ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে সৃষ্ট 'সাইক্লোনিক সিস্টেম' থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় 'অশনি'র মোকাবেলায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়।
এর অংশ হিসেবে প্রতিটি ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের নির্দেশনাসহ ৯টি কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আরআরআরসি।
গত শুক্রবার আরআরআরসি কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিকন তংচ্যগ্যা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'যেসব পাহাড়ের ওপর রোহিঙ্গারা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় তাদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রতি ক্যাম্পে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের নির্দেশনার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ফোন নম্বর সবাইকে জানিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।