logo
আপডেট : ৭ মে, ২০২২ ২০:১৫
মুহিতের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা
পরিবারের লোকজন স্বজন হারালেও দেশ হারিয়েছে সম্পদ
কূটনৈতিক প্রতিবেদক

পরিবারের লোকজন স্বজন হারালেও
দেশ হারিয়েছে সম্পদ

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে দেশের বিশিষ্টজনরা

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের লোকজন স্বজন হারালেও দেশ হারিয়েছে সম্পদ।

এ ক্ষতি কখনই পূরণ হবার নয়। তিনি আজীবন দেশ নিয়ে ভাবতেন। দেশকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় এর কৌশল ঠিক করতেন। একজন আমলা হিসেবে তিনি যেমন সফল তেমনি রাজনীতি, অর্থনীতি ও দেশপ্রেমের দিক থেকেও তাঁর তুলনা হয় না।

রাজনীতিবীদ হিসেবেও সব মানুষের মন জয় করেছেন তিনি। দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। দল মত নির্বিশেষে সবার কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।

শনিবার (৭ই মে) বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

এতে অংশ নেন মরহুমের আত্মীয়স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, সরকারে দায়িত্বশীল প্রতিনিধি, ব্যবসায়ি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজকর্মী, মসজিদের মুসল্লিসহ অন্যান্যরা।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন গুলশান কেন্দ্রীয় মসজিদের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ফজল বুলবুল।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এমন একজন ভালো মনুষের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট ভাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমার বড়ো ভাই সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ ছিলেন। আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি, কিন্তু দেশ হারিয়েছে সম্পদ।

দেশ সম্পর্কে তিনি অনেক চিন্তা করতেন, আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা করতাম। আপনারা সাবাই ওনার জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন দেশ ও দশের জন্য কাজ করে যেতে পারি সেজন্যও দোয়া করবেন’।

বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ছেলে সামির মুহিত বলেন, ‘আপনারা আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আব্বা দেশের জন্য সব সময় কাজ করেছেন। আমরাও কাজ করে যেতে চাই।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবকে দু’তিন ভাবে দেখেছি একথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রথমে ছোট বেলায় বাবার ছাত্র হিসেবে তাঁর নাম শুনতাম।

সর্বশেষ তাকে দেখেছি যখন তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। তিনি অত্যন্ত সহজ সরল ছিলেন। সবার খোঁজ খবর নিতেন। সিলেটের প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল এবং ভালোবাসা ছিল। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন’।
আবুল মাল আবদুল মুহিতের দীর্ঘ দিনের বন্ধু ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর (মুহিত) সঙ্গে আমর ঘনিষ্ঠতা ছিল একাধিক স্তরের। সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার সংগ্রাম ও নিবেদিত দায়িত্ব পালন স্মরণীয় হয়ে থকবে। বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের প্রতি তার ছিল প্রচণ্ড দুর্বলতা। দেশ ও মানুষের প্রতি নির্মোহ ও লড়াকু ছিলেন এই কিংবদন্তী’।

প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মুহিত সাহেব সরকারের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছেন।

তরুণ প্রজন্মের কথা শুনেছেন এবং তাদের কথা বলেছেন। মুহিত ভাই নিশ্চয়ই জান্নাতি হবেন, এটা আমাদের দোয়া।’

মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘উনি সবার প্রতি অমায়িক ছিলেন, আমরা তার জন্য দোয়া করবো’।

এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘মুহিত সাহেব কতো বড়ো মাপের অর্থনীতিবিদ ও ভালো মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ মিডিয়া।

কৃষক পরিবারের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইকে শক্তিশালি করছেন। তার স্বপ্ন পূরণে প্রতিবছর ১২শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়’।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘মুহিত সাহেব বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে একজন সফল অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

বাংলাদেশের ঘুরে দাড়ানো ও উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি সেটি বাস্তবায়ন করেছেন।

মুহিত সাহেব অত্যান্ত সহজ-সরল ও সদা হাস্যোজ্জল ছিলেন।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, ‘তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষকের মাঝে ছুটে যেতেন এবং তাদের সুখদুখের কথা শুনতেন। দেশের জন্য তিনি কাজ করেছেন, তারজন্য নিশ্চয়ই আখেরাতে ভালো কিছু রয়েছে’।
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবুল মাল আবদুল মুহিত ৮৮ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

গত ২৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এরপর তাকে সিলেটের রায়নগরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ও সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরীর ১৪ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। কর্মজীবনে তিনি কূটনীতিকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তার ছোট ভাই। স্ত্রী সৈয়দা সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ।

বড় ছেলে সাহেদ মুহিত স্থপতি এবং ছোট ছেলে সামির মুহিত একজন শিক্ষক।