logo
আপডেট : ৮ মে, ২০২২ ১১:৩৬
সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ হচ্ছে
*এনআইডি ও মোবাইল ফোন নম্বর বাধ্যতামূলক *মাত্রাতিরিক্ত দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ করাই লক্ষ্য
মো. রেজাউর রহিম

সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে বাড়তি
কড়াকড়ি আরোপ হচ্ছে

ফাইল ফটো

দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে দর্শনার্থী ও অন্যদের প্রবেশের ক্ষেত্রে বাড়তি কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বৃদ্ধিকল্পে এবং মাত্রাতিরিক্ত দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ করতে বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং মোবাইল ফোন নম্বর। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদের দেওয়া সচিবালয় প্রবেশ পাস ও কার্ডের ক্ষেত্রেও এনআইডি ও মোবাইল নম্বর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা এ বিষয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছেন। এছাড়া সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট নুসরাত শারমিনের পাঠানো চিঠিতেও সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে এনআইডি, মোবাইল ফোন নম্বর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসির প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন ভোরের আকাশ’কে বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে সচিবালয়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে এনআইডি, মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সচিবালয় যেহেতু প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এজন্য নিরাপত্তা বিধানে দর্শনার্থীদের এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া বিভিন্ন মেয়াদের প্রবেশ কার্ড এবং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকদের এনআইডি এবং মোবাইল ফোন নম্বর দিতে হবে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, এসব ক্ষেত্রেও নতুন করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি জানান, শিগগির এ পদক্ষেপ কার্যকর করা হবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইসিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র এবং সংরক্ষিত স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিবদের দপ্তর সচিবালয়ে অবস্থিত। সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বিভিন্ন মেয়াদের পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুরোনো এনালগ ও র‌্যাপিড (আরএফআইডি) পাসের পরিবর্তে উন্নতমানের ডিজিটাল প্রবেশ পাস প্রদান, নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত যন্ত্রে পাঞ্চ, প্রদর্শন-স্পর্শকরণের মাধ্যমে প্রবেশ ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের জন্য দর্শনার্থী গেটে র‌্যাপিড কার্ড, ভেহিক্যাল স্ক্যানার দ্বারা আইডেনটিফিকেশন, ভেহিক্যাল স্টিকার, মনিটরিং, অপারেশন এবং ব্যাকআপ রুম প্রস্তুতকরণ সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (উপসচিব-তদূর্ধ্ব), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়র, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর-সংস্থার প্রধান এবং গেজেটভুক্ত সিআইপিদের পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত সহকারীদের বিভিন্ন মেয়াদের সচিবালয়ে প্রবেশ পাস দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন পেশার মানুষ বিভিন্ন কর্মদিবসে পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করে থাকেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টিমে প্রবেশ পাসে এনআইডি নম্বর সংযোজন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেমটি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এনআইডি’র তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় ও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া এর আগে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তির দক্ষতা উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীণ সফটওয়্যার পার্লামেন্ট রির্সোস প্ল্যানিংয়ের আওতায় গেট পাস মডিউল এবং ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাবের আওতায় এমপি পোর্টাল মডিউলের সঙ্গে দেশের নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংযোজন করা প্রয়োজন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইং এ বিষয়ে বৈঠক করেছে এবং তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ভোটার বা নাগরিকের তথ্য সুরক্ষিত রাখা ইসির পবিত্র আমানত ও দায়িত্ব। যেকোনো নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য কিছু করণীয়-অনুসরণীয় আছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, এনআইডির তথ্য-ভাণ্ডারে বৈধ-প্রবেশের জন্য নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে ইসির সঙ্গে চুক্তি বা সমঝোতা চুক্তি থাকতে হয়। কারিগরি বিষয়গুলো সম্পন্ন হলে এনআইডি যাচাইয়ের কার্যক্রমটি সহজতর হবে।

জানা গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে এপিআইর মাধ্যমে তথ্য প্রদান করা যাবে। এক্ষেত্রে ইনপুট হিসেবে ব্যবহারকারীকে এনআইডি নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমে দর্শনার্থীর নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বর্তমানে ১৫৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনআইডি এন্ট্রিগ্রেশন রয়েছে, যার মধ্যে ৪৩টি হলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। সংসদ সচিবালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে এপিআই চুক্তি সম্পাদন হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৫টি।

উল্লেখ্য, জরুরি প্রয়োজনে সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস ইস্যু করা সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর একান্ত সচিবরা দিনে ১০টি করে এবং সচিবদের একান্ত সচিবরা পাঁচটি করে দর্শনার্থী পাস ইস্যু করতে পারবেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা প্রতি কর্মদিবসে পাঁচটি করে দর্শনার্থী পাস ইস্যু করতে পারবেন।