logo
আপডেট : ১০ মে, ২০২২ ১৩:০৫
এক টুকরো সৌন্দর্য রাজধানীর সবুজবাগের গঙ্গাসাগর দীঘি
শিপংকর শীল

এক টুকরো সৌন্দর্য রাজধানীর সবুজবাগের গঙ্গাসাগর দীঘি

গঙ্গাসাগর দীঘি (ফাইল ফটো)

মোগল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতিবিজড়িত রাজধানীর সবুজবাগ থানার রাজারবাগের কালিবাড়ীর ঐতিহাসিক গঙ্গাসাগর দীঘি। পাশেই বরদেশ্বরী কালিমন্দির। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে স্থাপিত হলেও দৃষ্টিনন্দন মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এটি এখন রাজধানীর সৌন্দর্যপিপাসুদের মাঝে অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবেও ঠাঁই করে নিয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে প্রকৃতির অবারিত সুষমা গঙ্গাসাগর দীঘিতে টেনে আনে ভ্রমণপ্রিয়দের। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগে হৃদয় আর চোখকে শীতল করার পাশাপাশি সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহের স্মৃতিতেও ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে যেতে পারেন দর্শনার্থীরা।

অতীত আর বর্তমানের সঙ্গে ইতিহাস ও নান্দনিকতার সেতুবন্ধনে সৌন্দর্যপিপাসুদের মানসপটে চিত্রিত হয় ভিন্ন এক ভালো লাগা। প্রতি বছর এখানে দেশ বিদেশের ধর্মযাজক, সাধুসহ বহু পর্যটক মন্দির পরিদর্শনে আসেন এবং গঙ্গাসাগর দীঘিতে স্নান করেন।

জানা যায়, রাজধানীর সবুজবাগ থানার বাসাবোর রাজারবাগে ১১.৪৪ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির প্রাঙ্গণে গঙ্গাসাগর দীঘির অবস্থান। আর প্রধান মন্দিরের পশ্চিমে গঙ্গাসাগর দীঘি। পাশেই জিহজতলা গাছের শীতল ছায়ায় দীঘির পূর্ব ও উত্তর কোনায় রয়েছে মহাদেবের তীর্থস্থান।

জনসাধারণের সুবিধার জন্য দীঘির পূর্ব এবং দক্ষিণে রয়েছে শানবাঁধানো ৩টি পাকা ঘাট। পশ্চিম পাশে রয়েছে শিতলা মন্দির ও লোকনাথ বাবার আশ্রম। এককথায় প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্যের হাতছানিতে এখানে আগতরা মুগ্ধ হবেই। শুধুই বিনোদন কেন্দ্র বা তীর্থ স্থান হিসেবে নয়, মন্দিরসংলগ্ন আশপাশের দক্ষিণগাঁও, নন্দীপাড়া, বাসাবো, মান্ডা, মাদারটেক, গোড়ান এলাকায় যখন পানি থাকে না, তখন এসব এলাকার বাসিন্দারা গঙ্গাসাগরের পানি ব্যবহার করেন সব কাজে।

ষোড়শ শতকের শেষের দিকে বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যে মোগল সম্রাট আকবর দিল্লি থেকে তার প্রধান সেনাপতি রাজা মানসিংহকে পাঠান। সুবেদার ঈশা খাঁকে দমন করে বাংলা বিজয়ের উদ্দেশ্যেই মানসিংহকে পাঠানো হয়। ঈশা খাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার আগে রাজা মানসিংহ সবুজবাগে তাঁবু ফেলেন। ওই এলাকায় তখন পানীয় জলের অভাব ছিল প্রকট। তখন রাজা মানসিংহ নিজের সৈন্যদের ব্যবহার এবং ওই এলাকার জনগণের প্রয়োজনে সেখানে খনন করেন গঙ্গাসাগর দীঘি। দীঘির উত্তর-পশ্চিম কোণায় একটি মহাশ্মশানও প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। বানানো হয় একটি মন্দিরও, যা বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির নামে পরিচিত।

১৯০৬ সালে প্রকাশিত পাশ্চাত্যের বিশিষ্ট পণ্ডিত এফবি ব্রাংকলে বার্ট তার ‘দি রোমান্স অব এন ইস্টার্ন ক্যাপিটাল’ বইয়েও সুস্পষ্টভাবে এ বিষয়টির উল্লেখ করেছেন। ‘প্রাচ্যের রহস্য নগরী’ নামে পরবর্তীতে বইটি বাংলায় অনুবাদ করেন রহিম উদ্দিন আফজে। আর সেটিতেও এ বিষয়ের সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।

জানা যায়, বরদেশ্বরী কালিমাতা মন্দির ও গঙ্গাসাগর দীঘি ঘিরে বিভিন্ন উপলক্ষে নানা ধরনের উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে পূর্ণিমা তিথিতে অষ্টমী স্নান, বারণী স্নান ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে এখানে বসে তিন দিনের মেলা। জাঁকজমকপূর্ণ এ মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে থাকে নাটকের মঞ্চায়ন, যাত্রাপালা ও সংগীতের আসর।

সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বিশাল পরিমাণ এ সম্পত্তি দিন দিন মহামূল্যবান হওয়ায় একটি অপশক্তি এটি আত্মসাৎ করার ষড়যন্তে লিপ্ত হয়। মন্দিরের বহু মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রটি মিথ্যা মামলা, জাল দলিল, নকল কাগজপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে মন্দিরের সম্পত্তি গ্রাস করার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে বলেও জানা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর (বরদেশ্বরী কালিমাতা ও শ্মশান কমিটি) লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস বলেন, মন্দিরের পবিত্রতা ও সম্পত্তি রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলাম বলে আমাদের কমিটির কয়েকজনকে কয়েকটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাই আমি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

কমিটির আরেক সদস্য উৎপল কুমার দাস জানান, আগে ঐতিহাসিক দীঘি থেকে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা মাটি কেটে নিত। এটা বন্ধ করার জন্য বাউন্ডারি হিসেবে ১৬১টি দোকান এবং পূর্ব ও দক্ষিণ পাশে মোট ৭০টি আবাসন গৃহনির্মাণ করা হয়। যাতে বাইরের কেউ দীঘির পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে।