logo
আপডেট : ১০ মে, ২০২২ ১৩:৫৬
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাশরুম কেন্দ্রের বেহাল দশা
বর্ধিত হয়নি প্রকল্পের মেয়াদ
অরণ্য জুয়েল, রাঙামাটি

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাশরুম কেন্দ্রের বেহাল দশা

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্র। শুরুতেই দ্রুত সাফল্য পাওয়া এ প্রকল্পটির কার্যক্রম চলছে এখন নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে। পুরোনো জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে চলছে মাশরুম বীজ উৎপাদন কার্যক্রম।

কেন্দ্রটির বেশির ভাগ যন্ত্রপাতিই প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখানো প্রকল্পটি মেয়াদ বর্ধিত না করায় এখন সংকটে পড়েছে।

সক্ষমতার অনেক কম বীজ উৎপাদন করে কোনোভাবে টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের বীজের ওপর নির্ভর করেই ব্যবসা পরিচালনা করেন স্থানীয় চাষিরা। কিন্তু সময়মতো পর্যাপ্ত বীজ না পাওয়ায় এখন বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে প্রকল্পটি পুনরায় চালু হলে এ সংকট কমবে বলে আশাবাদ কর্তৃপক্ষের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা শহরের আসামবস্তি এলাকায় প্রায় দেড় একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় ‘জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র’ নামের এ বীজ উৎপাদন কেন্দ্রটি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) মাশরুম উন্নয়ন জোরদারকরণ প্রকল্পের অধীনে ২০০৯ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। এখান থেকে উৎপাদিত বীজ কিনে চাষিরা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাশরুম চাষ করে থাকেন।

পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তবে ২০১৮ সালে দুই লাখ টাকার রিভলভিং ফান্ডের মাধ্যমে ফের বীজ উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ২০০৯ সালে কেন্দ্রটি শুরু হওয়ার পর এখানে দৈনিক দুই হাজার বীজ উৎপাদন করা হলেও বর্তমানে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০টি বীজ। ফলে চাহিদায় অপ্রতুল হওয়ায় স্থানীয় চাষিদের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও।

মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্রটিতে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, ল্যাব ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র জরাজীর্ণ। বীজ তৈরির কারখানার সিলিং ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়া সিলিংয়ের একপাশে বীজ তৈরির কাজে ব্যস্ত শ্রমিকরা। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি ও আসবাব। অফিস, আবাসিক ভবন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। রাত হলে কেন্দ্রটি স্থানীয় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিক মো. ইয়াসিন বলেন, ‘বর্ষাকালে পানি পড়ে মাল মিক্সার বানাতে, প্যাকেট করতে সমস্যা হয়। খড়, ভুসিসহ সব জিনিসপত্র ভিজে যায়। কাজ বন্ধ করে রাখতে হয়।’

আরেক শ্রমিক আব্দুস সাত্তার শুভ বলেন, ‘শুরুর দিকে চাহিদা অনুযায়ী দিনে তিন-চার হাজার বীজ উৎপাদন করা হতো। কিন্তু এখন ১৫০ থেকে ২০০। স্থানীয় চাষিদের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত বীজ সরবরাহ করতে সক্ষম নয়।’

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে রাঙামাটির জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রে কাজ করছেন শ্রমিকেরা

 

পর্যাপ্ত বীজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মাশরুম চাষিদের একজন সুমেদ চাকমা। তিনি বলেন, ‘বীজ সংকটের কারণে সঠিকভাবে উৎপাদনেও যাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাজারে মাশরুমের চাহিদা থাকলেও বীজ সংকটে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক চাষি বীজ না পেয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে বেকার জীবনযাপন করছেন।’

প্রকল্পের কার্যক্রম ছোট করে কোনোভাবে কাজ চালু রাখা হয়েছে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ২০০ বীজ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকের কাছে এর চাহিদা অনেক। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বর্ধিত না করা পর্যন্ত এই সংকট কাটছে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

প্রকল্পটি শেষ হলেও কোনোমতে পুরোনো যন্ত্রপাতির সাহায্যে আমরা সীমিত আকারে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি’ বলছিলেন মাশরুম বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, চাষিদের প্রচুর মাশরুম বীজের চাহিদা রয়েছে। আমরা আর্থিক সংকটের কারণে পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছি না। এখন রিভলভিং ফান্ডের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছি। যদি প্রকল্প পুনরায় চালু হয় তবে এ সংকট কাটবে।’

তবে সম্ভাবনাময় এই প্রকল্পটি আবারো পূর্ণদমে সক্রিয় করার আশার কথা শুনিয়েছেন জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ রাঙামাটি উপকেন্দ্রের উদ্যানতত্ত্ববিদ মো. মেজবাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, ’এরই মধ্যে আমি একটি প্রাক্কলন তৈরি করেছি। সেটি সাভারের কেন্দ্রীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যদি প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখে, তাহলে আমরা মাশরুম চাষিদের আবারো কাক্সিক্ষত বীজ সরবরাহ করতে পারব।’