logo
আপডেট : ১০ মে, ২০২২ ২১:০৯
মজুতবিরোধী অভিযান
চার জেলায় মিলল ১ লাখ ৩৮ হাজার লিটার তেল
ভোরের আকাশ ডেস্ক

চার জেলায় মিলল ১ লাখ ৩৮ হাজার লিটার তেল

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের একটি গোডাউন থেকেই ২০ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করেছে পুলিশ

অবৈধভাবে তেল মজুত করার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং পুলিশ। এসব অভিযানে চার জেলায় ডিলার এবং খুচরা দোকানিদের গুদাম থেকে বিপুল পরিমাণ তেল উদ্ধার করা হয়। এ সময় তারা ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অঙ্কে জরিমানা করেন। উদ্ধারকৃত তেল ঈদের আগের নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করতে কোথাও কোথাও বাধ্য করা হয়। সবচেয়ে বড় মজুত ধরা পড়ে রাজশাহীতে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলার বানেশ্বর বাজারে অভিযান চালিয়ে চারটি গোডাউন থেকে জব্দ করা হয় ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল। সোমবার রাতেও জেলার বাগমারায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছিল ২০ হাজার ৪০০ লিটার তেল। ভোরের আকাশের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চার জেলায় উদ্ধার করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০৬ লিটার ভোজ্যতেল।

প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট

রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে চারটি গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। পুলিশ জানায়, বানেশ্বর বাজারের রিমা স্টোরে ৬২ ব্যারেল, এন্তাজ হাজিরর গোডাউন ১৫৬ ব্যারেল, মেসার্স পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সে ১০৩ ব্যারেল এবং সরকার সন্সে ৭৪ ব্যারেল পাওয়া যায়। প্রতি ব্যারেলে ২০৪ লিটার তেল থাকে। এর মধ্যে পামওয়েল ছিল ৬৭ হাজার ৯৩২ লিটার ও সয়াবিন তেল ২৪ হাজার ৬৮৪ লিটার। অভিযানের নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ। তিনি জানান, অবৈধভাবে যারা তেল মজুত করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাহেববাজারে মিলল ১৩২ লিটার তেল : মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তারা হুমায়ুন স্টোরে তেল না পেলেও তাদের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ১৩২ লিটার তেল জব্দ করেন, যা আগে থেকেই কেনা ছিল। বেশি মুনাফার উদ্দেশ্যে তেলগুলো সেখানে রাখা ছিল। এ সময় অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রির দায়ে একাধিক দোকানকে জরিমানা করা হয়।

বাগমারায় গোডাউন থেকে ২০ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর বাজারের একটি গোডাউন থেকেই ২০ হাজার ৪০০ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করেছে পুলিশ। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তেলের মালিক ব্যবসায়ী স্বপন সাজিকে। সোমবার রাতে পুলিশ এ অভিযান চালায়। জব্দ তেলের মধ্যে ১৯ হাজার ৩৮০ লিটার সয়াবিন ও ১ হাজার ২০ লিটার সরিষার তেল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম বলেন, তাহেরপুর বাজারে একটি সরকারি গোডাউন রয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেটি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করে। ওই গোডাউনে টিসিবির পণ্য থাকতে পারে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে ১০০ ড্রাম তেল পাওয়া যায়।

পুলিশ জানায়, ১০০ ড্রাম তেলের মধ্যে ৯৫ ড্রামে রয়েছে সোয়াবিন তেল। প্রতি ড্রামে তেল রয়েছে ২০৪ লিটার। সে হিসেবে সয়াবিন তেল রয়েছে ১৯ হাজার ৩৮০ লিটার। আর পাঁচ ড্রামে রয়েছে ১ হাজার ২০ লিটার সরিষার তেল। অভিযানের সময় এর মালিক সাজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে তার গোডাউন সিল করে দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম, পুঠিয়া সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার অলক বিশ্বাস, বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ।

গাজীপুরে ৭ হাজার ৫৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ : গাজীপুর মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকার দুটি গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুতকৃত ৭ হাজার ৫৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় দুই গুদাম মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে বোর্ড বাজারের মনির ট্রেডার্স ও মেসার্স আরপি ট্রেডার্সের গুদামে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তর গাজীপুরের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবদুল জব্বার মণ্ডল।

আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, অবৈধভাবে সয়াবিন তেল মজুতের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোর্ডবাজার এলাকায় মান্নান টাওয়ারে অবস্থিত মেসার্স মনির জেনারেল স্টোরে অভিযান পরিচালনা করা হয়। দোকান মালিক তার গুদামে ১ লিটার, ২ লিটার ও ৫ লিটার পরিমাণের বোতলজাত ২ হাজার ৫৮ লিটার সয়াবিন তেল অবৈধভাবে মজুত করে রেখেছিলেন। এসব তেল ঈদের আগে কম দামে কিনে মজুত করে রাখা হয়েছিল অতিরিক্ত মুনাফায় বিক্রি করার উদ্দেশ্যে।

বাজারে সংকট তৈরি করে দোকান মালিক বর্তমান বেশি মূল্যে বিক্রি করছিলেন। এ কারণে দোকান মালিক মনির হোসেনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরে পার্শ্ববর্তী মেসার্স আরপি ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পাওয়া যায় আরো ৫ হাজার লিটার তেল। তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে তেল বিক্রি ও মূল্য তালিকা না থাকায় ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

১৮ হাজার লিটার তেল উদ্ধারে ২০ হাজার টাকা জরিমানায় ক্ষোভ : পাবনার ঈশ্বরদীর বাজারে শ্যামল স্টোরের গুদামে অভিযান চালিয়ে মজুত করা ১০ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল, ১ হাজার ২৪৪ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এবং ৭ হাজার লিটার সরিষার তেল উদ্ধার করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এত কম জরিমানা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উপস্থিত সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল পালের গুদামে অভিযান পরিচালনা করেন পাবনা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহিরুল ইসলাম।

এ সময় তিনি ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও ভোজ্যতেল জনসম্মুখে ঈদের আগের দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির নির্দেশ দেন। এ সময় প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ঈশ্বরদীর নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক সানোয়ার রহমান।

ঈদের আগে এসব ভোজ্যতেল সংগ্রহ করে গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেন শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল দত্ত পাল। এদিকে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল উদ্ধারের পরও মাত্র ২০ হাজার টাকা জরিমানা করায় উপস্থিত ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

স্বপন হোসেন নামে একজন ক্রেতা জানান, শ্যামল পালের গোডাউনের মালামাল জব্দ ও সিলগালা করা উচিত ছিল। শ্যামল পালের মতো আরো বেশ কয়েকজন তেল মজুতদার ব্যবসায়ী রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনার দাবিও জানান তিনি।

রংপুরে ৩০০ লিটার তেল জব্দ করে বিক্রি : রংপুরের মাহিগঞ্জের মোমেনা স্টোরে অভিযান চালিয়ে ৩০০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার। পরে সেগুলো স্থানীয়দেন মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়। তবে এ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্রিতা। তার দাবি, তিনি পাইকারি ব্যবসায়ী। ৩০০ লিটার তেল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই অভিযান চালানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফ মিয়া।

তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে আব্দুর রহমান মণ্ডলের দোকান ও গুদামে অভিযান চালাই। সেখান থেকে ৩০০ লিটার সয়াবিন জব্দ করা হয়। পরে বোতলের গায়ের মূল্য অনুযায়ী সেগুলো সেখানে বিক্রি করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ সয়াবিন মজুত করে বেশি দামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল। আমরা পুলিশ ও বাজার কমিটির সহযোগিতায় এ অভিযান চালাই। পাশাপাশি মাইকে প্রচার করি, যাদের তেলের প্রয়োজন আছে তারা তেল নিন। সেসময় অনেকেই তেল কিনেছেন।’

মাহিগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ টিটু বলেন, ‘যখন অভিযান চালানো হয়, তখন আমি ছিলাম। অনেকেই তেল পেয়েছে এবং বোতলের গায়ে যে দাম লেখা ছিল, সেই দামে বিক্রি করেছে।’ তবে দোকানের মালিক আব্দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আমি তো পাইকারি বিক্রেতা, ৩০০ লিটার তেল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’