logo
আপডেট : ১১ মে, ২০২২ ১৬:০২
তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী রত্নাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক

তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী রত্নাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি

মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য সৈয়দা রত্নাকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্নাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য সৈয়দা রত্নাকে এ চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

চিঠি প্রসঙ্গে সৈয়দা রত্না বলেন, 'বাইরে অঝোরে বৃষ্টি। সন্ধ্যার আকাশে তখনও আলো আঁধারির খেলা শেষ হয়নি। বাড়ির দরজায় একজন মোটরসাইকেল আরোহী এসে থামলেন। দরজায় কড়া নেড়ে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি সামনে যেতেই বললেন, 'আপনিই সৈয়দা রত্না?' আমার অবাক হবার পালা সবে শুরু তখন। আমাকে অবাক করে বললেন-'শ্রদ্ধেয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার জন্য একটি চিঠি দিয়েছেন।' আমি তাকিয়ে আছি দেখে তিনি বললেন,'তেঁতুলতলা মাঠের জন্য আপনার আন্দোলন ও সফলতার অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রী।'

রাজধানীর কলাবাগান মাঠ রক্ষার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের স্বাক্ষরিত ধন্যবাদপত্র পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সৈয়দা রত্না।

তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন মাননীয় মন্ত্রী একটি ভালো কাজের অভিনন্দন দিয়েছেন, এই সংস্কৃতি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ ও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। একজন সরকারি দপ্তর এবং ব্যক্তির কাছ থেকে অভিনন্দন আমার জন্য অভিভূত হবার মতোই ব্যাপার। সত্যিই ভালো মানুষেরা ভালো কাজের কদর জানেন।’

তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমি বেশ জানতাম, আমি আমার প্রিয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ও নির্দেশ পালন করছি। আমি একদম সঠিক পথে আছি। আজ আমার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এই যে উচ্চ পর্যায়ের একজন সরকারি কর্তা ব্যক্তির কাছ থেকে অভিনন্দন প্রাপ্তি, এর সব আনন্দ ও সাফল্য আমার সাথে যারা সহযোগিতা-সমর্থন-সাহায্য-সাহস জুগিয়েছেন তাদের।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, ‘সালাম নিবেন। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি এ ওয়ার্ডে বসবাসরত তিন লাখ মানুষের একমাত্র উন্মুক্ত স্থান এবং খেলার মাঠ হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত। এই মাঠ রক্ষার ক্ষেত্রে আপনার উদ্যোগ-এর কথা পত্রিকায় পড়তে গিয়ে আমার শৈশব ও কৈশোরকালের কথা মনে পড়ে যায়। সেই সময়ে সিলেট অঞ্চলে অনেক খেলার মাঠ এবং বড় বড় পুকুর বা দীঘি ছিল। সেখানে আমাদের শৈশবকাল অত্যন্ত আনন্দের সাথে অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে জলাশয়গুলো ভরাট করে অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং খেলার মাঠগুলোতে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে এলাকার যুব সমাজ এবং কিশোর-কিশোরীরা খেলার মাঠের অভাবে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মাদকদ্রব্য সেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ছে।

দেশের প্রত্যেক শহরে উন্মুক্ত মাঠ ও পুকুর বা জলাশয় থাকা একান্ত প্রয়োজন এবং আরো বেশি প্রয়োজন যে সমস্ত এলাকা ভুমিকম্প প্রবণ।

সালাম ও শুভাচ্ছান্তে
একান্তভাবে আপনার,
ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন, এমপি।'

মঙ্গলবার রাতে মন্ত্রীর চিঠি ফেসবুকে পোস্ট করেন সমাজকর্মী রত্না। এরপর থেকে তিনি আরো বেশি অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন।

রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠটি বরাদ্দ পেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেয় পুলিশ। কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণ হবে বলে টানানো হয় সাইনবোর্ড। এরপর থেকেই শুরু হয় তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলন।

গত ২৪ এপ্রিল সকালে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে পুলিশ। প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় থাকার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মা ও ছেলে।

রত্না ও তার ছেলেকে আটক করার পর মাঠ রক্ষার আন্দোলন আরও জোরদার হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হন। দফায় দফায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করা হয়।

২৭ এপ্রিল সচিবালয়ে অধিকারকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। পরদিন ২৮ এপ্রিল দুপুরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সেখানে আপাতত থানা করতে নিষেধ করেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আসার পর আনন্দে মেতে ওঠেন শিশু-কিশোর, স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা। ২৮ এপ্রিল রাতেই মাঠ থেকে পুলিশি পাহারা উঠিয়ে নেয়া হয়। মাঠের প্রান্তে সীমানাপ্রাচীর করা হলেও ভেতরে যাওয়ার জন্য এক পাশ খোলা রয়েছে। মাঠটি খেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে শিশু-কিশোররা। ঈদের জামাতও হয়েছে সেখানে।