এক হাজার মাদ্রাসার তথ্য-উপাত্তের ওপর তদন্ত করে ১০০ ধর্মব্যবসায়ীর দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তালিকা জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন। একই দিনে মানবাধিকার কমিশনের কাছেও আনুষ্ঠানিক শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লার কাছে এই শ্বেতপত্র ও ১০০ সন্দেহভাজন ধর্মব্যবসায়ী ব্যক্তির তালিকা তুলে দেওয়া হয়। গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তালিকা জমা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আমরা ৯ মাস তদন্ত করেছি। বহু ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য নিয়েছি। ২২শ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন গত মার্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছি। তারা মানিলন্ডারিং করেছে। জামায়াত ও ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সেই দুর্নীতির তথ্য দিলাম। তাদের বাড়তে দেওয়া যায় না।
দুদক চেয়ারম্যানের বক্তব্য তুলে ধরে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন অর্ধশতাধিক ওয়াজ ব্যবসায়ীর দুর্নীতির খোঁজ শুরু করেছেন। আমাদের রিপোর্ট দুদক আইনমতে ব্যবস্থা নেবেন। যারা অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামনুল হকসহ যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।
মানিক বলেন, আমাদের শ্বেতপত্র দুদকের কাজে আসবে। ডিসি, এসপি ও ইউএনওসহ যারা এই গোষ্ঠীদের উসকানি দেয় তাদের নাম উল্লেখ করেছি। বিশেষ করে নোয়াখালীর এসপির বিরুদ্ধে বলেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে।
গণকমিশনের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমরা এক হাজার মাদ্রাসা ও ওয়াজকারীদের ওপর তদন্ত করেছি, শ্বেতপত্রে বিস্তারিত আছে। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও হেফাজতের কর্মকাণ্ড উঠে এসেছে। তাদের অর্থনৈতিক জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও গণকমিশনের সমন্বয়ক কাজী মুকুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই রিপোর্ট। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অপরাধগুলো আমলে নিতে এই রিপোর্টে বলা আছে। দুদকে আসার কারণ একটাই। কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি এখানে মৌলবাদী গোষ্ঠীর অর্থের একটা প্রেসার আছে, যেটা দ্বারা আমাদের তরুণরা ভিন্নপথে পরিচালিত হচ্ছে। আমরা সব মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করছি।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আসিফ মুনির তন্ময়, ব্যারিস্টার নাহিদা চৌধুরী, মো. সাইফউদ্দিন রুবেল প্রমুখ।
‘বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, যার পৃষ্ঠা সংখ্যা ২১০০-এর অধিক। গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনে এই শ্বেতপত্রের কপি হস্তান্তর করেন গণকমিশনের চেয়ারপার্সন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কমিশনের সচিবালয়ের সমন্বয়কারী কাজী মুকুল, সদস্য শহীদসন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় ও ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী।
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘মৌলবাদী সাম্প্রদায়িকতা কর্মকাণ্ডের ছবিসহ বিবরণ, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি এবং এসব ঘটনার স্থায়ী সমাধানের জন্য শে^তপত্রে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে বিশেষ করে যারা এসব ঘটনায় দায়ী তাদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করেছি। আশা করছি, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িকতার শিকড় উপড়ে ফেলতে এই শে^তপত্র অপরাধ দমনসংশ্লিষ্ট বিশেষ করে ‘দুদক’কে সহযোগিতা করবে।’
দুদক থেকে বেরিয়ে গণকমিশনের নেতৃবৃন্দ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে শ্বেতপত্র তুলে দেন। এ সময় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ শ্বেতপত্র পড়ে মানবাধিকার কমিশনের আওতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন গণকমিশনের নেতৃবৃন্দকে।
কমিশনের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আর্থিক দুর্নীতি অনুসন্ধানে আমাদের শ্বেতপত্র ‘দুদক’-এর তদন্তে সহায়ক হবে। এ ছাড়া এই শ্বেতপত্র স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মান্ধদের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা অনুসন্ধান এবং এর উদ্দেশ্য অনুধাবনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে সহায়তা করবে।