লোকসানে ডুবতে বসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। বছরের পর বছর লোকসান দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ব্যাংকটি। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির শেয়ারে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা বেকায়দায় পড়েছেন। দর তলানিতে নেমে যাওয়ার কারণে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও এখান থেকে বের হতে পারছেন না।
এদিকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বৈরী পরিস্থিতিতে এর ব্যবসা অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ কারনে কোম্পানিটির ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা নিয়ে নিরীক্ষক শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ব্যাংকটির ২০২১ সালের আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় এই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষক জানিয়েছেন, ব্যাংকটির ২০২১ সালের ৩০ জুন পুঞ্জিভূত লোকসানের (রিটেইন লস) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। বিদ্যমান এই শোচনীয় দুরাবস্থার কারণে ব্যাংকটির ভবিষ্যতে ব্যবসা চালানোর সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরীক্ষক। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪৭ দশমিক ২৪ শতাংশ মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের হাতে।
সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৯ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ১৩ পয়সা। বার্ষিক প্রতিবেদনসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য আগামী ১৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে এজিএম করবে ব্যাংকটি।
১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটি আগে ‘দি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক লিমিটেড’ নামে পরিচিত ছিল। প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে ব্যাংকটি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ‘আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক’ নামে পথচলা শুরু করে ব্যাংকটি। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংকটিকে লোকসানি থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু প্রতিকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ, শেয়ারের মালিকানা নিয়ে মামলা, মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণের বোঝা ও অতীতের দায়-দেনার কারণে ঘুরে দাঁড়াতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি।
এদিকে লোকসানের কারণে বছরের পর বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যার জের ধরে দীর্ঘদিন ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানিটির শেয়ারদরে। ১০ টাকা অভিহিত দরের প্রতিটি শেয়ার এখন চার টাকা ১০ পয়সা থেকে ২০ পয়সার মধ্যে বেচাকেনা হচ্ছে। গত এক বছরের লেনদেন চিত্রে দেখা যায় এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার সর্বোচ্চ সাত টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়। একই সময়ে শেয়ারটি সর্বনিম্ন তিন টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়।
ব্যাংকটির মোট শেয়ারের মধ্যে ৫২ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে পরিচালকদের কাছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের কাছে।
ব্যাংকটির শেয়াধারীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দীর্ঘদিন থেকে এই শেয়ার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে রাকিব হাসান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ব্যাংক খাতের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। ব্যাংকটিতে বহুদিন আগে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু শেয়ার দর কমে যাওয়ায় বছরের পর অপেক্ষা করেও এখান থেকে বের হতে পারছি না। অন্যদিকে বছর শেষে কোম্পানিটি থেকে কোনো ধরনের লভ্যাংশও পাচ্ছি না। সব মিলে আমাদের অবস্থা নাজুক।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করে অন্যের কথায় বা গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করেন। যে কারণে অনেক সময় তাদের বিপদে পড়তে হয়। কোনো কোম্পানির আর্থিক অবস্থা যদি খারাপ হয় তাহলে তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করা উচিত। অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির সচিব উত্তম কুমার দের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।