logo
আপডেট : ১২ মে, ২০২২ ১৩:৪৫
'ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে'
নিজস্ব প্রতিবেদক

'ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে'

‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার তৎপরতার কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১০ মে পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ও ৮৪৪ জন আহত হয়েছেন। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের সঙ্গে তুলনা করলে এবার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, নিহত ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ও আহত ২৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বিদায়ী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত ৮৪৪ জন আহত হয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট দুর্ঘটনা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হকসহ সংগঠনটির নেতারা।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদায়ী ঈদুল ফিতরে যাতায়াতে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সম্মিলিতভাবে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সড়ক মহাসড়কে ৩৭২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪১৬ জন আর আহত হয়েছেন ৮৪৪ জন।

সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারাে প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাবরের মতাে এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মােটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৪টি মােটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত, ১১০ জন আহত হয়েছেন। যা মােট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের ১৩.০৩ শতাংশ প্রায়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২০৯ জন চালক, ২৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮৮ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৩ জন শিক্ষার্থী, ২ জন সাংবাদিক, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ২ জন শিক্ষক, ৬ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ২ জন মুক্তিযােদ্ধা, ১ জন চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ২ জন বীর মুক্তিযােদ্ধা, ১ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ডিজিএফআই সদস্য, ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৩৫ জন নারী, ১ জন চিকিৎসক, ২৫ জন শিশু, ২৫ জন শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক, ১২৫ জন চালক, ১২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬০ জন পথচারী, ৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

প্রতিবেদনে সংগঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে করে বলা হয়, মােট যানবাহনের ৩৮.৭৫ শতাংশ মােটরসাইকেল, ১৫.৪৯ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৮.৪৫ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৫.২৩ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ৮.৮৫ শতাংশ অটোরিক্সা, ৫.৪৩ শতাংশ ব্যাটারী রিক্সা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ও ১৭.৯০ শতাংশ বাস দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

দুর্ঘটনার ২০.৯৬ শতাংশ মুখােমুখি সংঘর্ষ, ৪২.৪৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়ী চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৫.৩২ শতাংশ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১৯.৮৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে, ১.০৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ ও ০.২৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে।

আরও বলা হয়, মােট দুর্ঘটনার ৩৩.৮৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪.৩৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৪ শতাংশ ফিডার রােডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে মােট দুর্ঘটনার ৪.৮৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২.৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিৰ সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরি বলেন, করােনা মুক্তির কারণে এবারের ঈদে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়। বিগত ২ বছর করােনা সংকটের কারণে গণপরিবহন বন্ধ-চালুর ফাঁকে প্রায় ১০ লাখ মােটরসাইকেল ও ২০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নামে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় ২৫ লাখ মােটরসাইকেল, ৪০ লাখ ইজিবাইক বহরে থাকার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার উল্লেখযোগ্য তৎপরতার কারনে ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বরাবরের মতাে বেড়েছে।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি প্রতীকি চিত্র বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মােটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতাে বেড়ে যাওয়ার কারণে পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ পঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও ঈদের এই সময়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন হারে প্রতিদিন রােগী ভর্তি হয়েছেন। যার ৬০ শতাংশ মােটরসাইকেল, ২৫ শতাংশ ইজিবাইক দুর্ঘটনার শিকার বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রােগী ভর্তি হচ্ছে। দেশের বিভাগীয় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রােগী ভর্তি হচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালে ও আক্রান্ত রােগীর যে ধরনের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায় প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের চিত্র সংবাদপত্রে উঠে আসেনা বলেই আমরাও এই ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরতে পারি না।

তিনি আরাে বলেন, সড়ক, রেল ও নৌ পথের উন্নয়নে সরকার কয়েক লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প প্রায় এক যুগ ধরে বাস্তবায়ন করে আসছে।

মােটরসাইকেল ও ইজিবাইকের আমদানী বন্ধের পাশাপাশি গণপরিবহনকে বিকশিত করার দাবী জানান তিনি।

সংবাদ সম্মলনের বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর ৫ লাখ মােটরসাইকেল বিপনন করে কোম্পানিগুলোর ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

বেশি সিসির মোটর সাইকেল অনুমোদন দেয়ায় বিআরটির সমালোচনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযােগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে।