logo
আপডেট : ১২ মে, ২০২২ ১৫:২৫
হাওরাঞ্চলে ব্যস্ততা বেড়েছে মাড়াইকল শ্রমিকদের
পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার

হাওরাঞ্চলে ব্যস্ততা বেড়েছে মাড়াইকল শ্রমিকদের

মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি এলাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে মাড়াইকল শ্রমিকদের

মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘি এলাকার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলে যান্ত্রিক যুগে ধান মাড়াইয়ে এসেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। একটা সময় গরু দিয়ে চলত ধান মাড়াইয়ের কাজ। এখন সেখানেও পৌঁছেছে মাড়াইয়ের কল। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে মাড়াইকল শ্রমিকদের।

হাওর ঘুরে সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগেও জমি থেকে ধান কাটা, সেই ধান বয়ে বাড়িতে আনা। তারপর গরু দিয়ে চলত সকাল থেকে রাত অব্দি ধান মাড়াইয়ের কাজ। এখন জমি থেকে ধান কেটেই পাশের মাঠে বা রাস্তার মোড়ে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ।

কল মালিক ছমির মিয়া ধান মাড়াইয়ের মেশিনসহ চারজন সঙ্গী নিয়ে দেড় মাস হলো এসেছেন কাওয়াদীঘি হাওর এলাকার কাদিপুর গ্রামে। তার বাড়ি সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নে।

তিনি জানান, যে গ্রামে তারা যান সেখানকার কোনো এক বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকেন। সেখানেই রান্না করে খান। ধান কাটা শেষের দিকে, তাই আর সপ্তাহখানেক আছেন এই হাওরে। তারপর তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়িতে ফিরবেন।

তিনি বলেন, ‘নগদ টাকার লেনদেন এখানে চলে না। লেনদেন হয় ধান দিয়ে। চুক্তিতে এক বিঘা ক্ষেতের ধান মাড়াই করতে এক মণ ধান নিয়ে থাকি।’

মাড়াইকলের শ্রমিক ফুলই নমশূদ্র জানান, কল মালিকসহ চারজন কাজ করছেন। মাড়াইয়ের শেষে কৃষকদের দেওয়া যে ধান পাওয়া যায়, তা পাঁচভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ মালিক, একভাগ মেশিনের খরচ বাবদ। বাকি তিনভাগ তারা তিনজনে পান।

কল মালিক ছমির মিয়া বলেন, ‘গ্রাম থেকে ডিজেল কিনলে লিটার প্রতি দশ টাকা বেশি দিতে হয়। মেশিন নিয়ে আসার সময় ২০ লিটার ডিজেল এনেছিলাম। এখন গ্রাম থেকেই কিনে নিই। এলাকার স্থানীয় পাইকারদের কাছে পাওয়া ধান বিক্রি করে টাকা পাই। তা দিয়ে বাজার হাট, তেল খরচ চালাই।’
মাড়াইকলের হেলপার শাহেদ মিয়া বলেন, এবার ঈদ করেছি হাওর এলাকায়। নামাজ পড়েই লেগে পড়ি মাড়াইয়ের কাজে। রোজার সময় কাজের চাপ বেশি ছিল। এখন একটু কম।

কাদিপুর গ্রামের কৃষক অমুল্য সরকার জানান, ধান কাটা শুরুর দিকে সাতটি মাড়াইকল এসেছিল এই এলাকায়। এখন ধান কাটা প্রায় শেষের পথে। দুইদিন ধরে দেখছি তিনটি মাড়াইকলের মেশিন আছে। আরো ১০ থেকে ১২ দিন লাগবে ধান মাড়াই শেষ করতে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৪৩০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৫৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর।

হাওর ঘুরে সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান কাটা শেষের পথে। আগাম জাতের ধান ব্রি-২৮ এবং ব্রি-২৯ও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। হাইব্রিড ধান ভালো হয়েছে। তবে শঙ্কা ছিল অতিবৃষ্টি ও বন্যার, এই শঙ্কা এখন আর নেই। কিন্তু গত দুই দিন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির জন্য মাড়াইয়ের ধান শুকাতে পারছেন না অনেক কৃষক পরিবার।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মূল হাওরের ধান কাটা শেষ। এখন হাওরের উপরি অংশে ধান কাটা হচ্ছে। আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে হাওরের উপরি অংশের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়ে যাবে।