logo
আপডেট : ১২ মে, ২০২২ ১৮:৩৫
অলিম্পিক পদক উপহার দিতে চান বশির আহমেদ মামুন
ক্রীড়া প্রতিবেদক

অলিম্পিক পদক উপহার দিতে চান 
বশির আহমেদ মামুন

দেশের ৮৫ গুণী ক্রীড়াব্যক্তিত্বকে বুধবার ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে জাতীয় পর্যায়ের ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে তিনি দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের। বর্তমানে ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ এ খেতাবে ভূষিত হওয়ায় অত্যন্ত আনন্দিত খেলাধুলা অন্তঃপ্রাণ এ ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। পুরস্কার পাওয়ার পর এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত ও গর্বিত, এটি একটি বড় পুরস্কার। এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে আমি খুবই আনন্দিত ও সম্মানিতবোধ করছি। এজন্য সরকারপ্রধান এবং যারা এ পুরস্কারের জন্য আমাকে মনোনীত করেছেন, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’ পুরস্কার পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত শেখ বশির আহমেদ মামুন জিমন্যাস্টিকসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্রথম অলিম্পিক পদক উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো

প্রশ্ন : জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্তিতে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তর : আমি আনন্দিত, সম্মানিত ও গর্বিত। এটি দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সর্বোচ্চ পুরস্কার। এজন্য সরকারপ্রধান এবং যারা এ পুরস্কারের জন্য আমাকে মনোনীত করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

প্রশ্ন : ক্রীড়াঙ্গনে আসার নেপথ্যে কে আপনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?
উত্তর : আসলে ক্রীড়াঙ্গনে আসার পেছনে আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হচ্ছেন আমার বাবা। তিনি খেলার প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী ছিলেন। বাবাকে দেখেছি, ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে তিনি যে শুধু ঢাকায়ই এসেছেন তা নয়, কলকাতা কিংবা মুম্বাইয়েও গেছেন। সঙ্গত কারণেই আমারও খেলার প্রতি দুর্বলতা জন্মেছে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান অবস্থানে আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?
উত্তর : বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। অনেক বেশি সংগঠিত এবং অনেক বেশি লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। বিভিন্ন খেলায় আমরা আন্তর্জাতিকভাবে ভালো করছি। তবে আমাদের আরো ভালো করা উচিত ছিল। এভাবে সুসংগঠিতভাবে আমরা আগে আসতে পারিনি। বিগত চার থেকে আট বছর ধরে আমরা পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে চলেছি। যাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গেমসগুলোয় আমরা ভালো করতে পারি। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা যেমন অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও বিভিন্ন ফেডারেশন এগিয়ে চলেছে। তবে এতে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি ভূমিকা নিতে হবে। বিশেষ করে যেসব খেলা বেশি সম্ভাবনাময়, সেগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাতে আমরা ওই খেলাগুলোকে আরো পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গন আরো সাফল্য পাবে।

প্রশ্ন : ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নের জন্য এদেশের খেলাগুলোকে ভাগ করে নিতে হবে। কোনো খেলাকেই বাদ দেওয়া যাবে না। তবে যেসব খেলায় সফলতা পাওয়ার সুযোগ বা সম্ভাবনা বেশি, যেসব খেলায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যেসব খেলায় আঞ্চলিক পর্যায়ে ভালো করতে পারবে, সেগুলো ঠিক না করা পর্যন্ত আমরা খুব বেশি এগোতে পারব না। আমাদের দেশে কয়েকটি খেলা এখন বেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছে। তবে আরো ৭-৮টা সম্ভাবনাময় ডিসিপ্লিন রয়েছে। আপনি যদি ৪৫ থেকে ৫০টা ফেডারেশনের সবগুলো এক চোখে দেখেন, তাহলে কখনোই খেলার উন্নতি হবে না। দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আর সে ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে গেলে এতগুলো ফেডারেশনকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়, কারণ আমাদের ওই পরিমাণ আর্থিক সচ্ছলতা নেই। ফেডারেশনগুলোকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলতে হবে, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফেডারেশনের অর্থ দিয়ে নিজেরাই কোচ আনতে পারে এবং বিদেশি কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এগুলো না করলে দ্রুত উন্নতি সম্ভব নয়।

প্রশ্ন : জিমন্যাস্টিকসের উন্নয়নের জন্য আপনার নতুন কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?
উত্তর : আমি প্রায় এক যুগ ধরে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। বিভিন্ন পরিকল্পনাও করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত অনুধাবন করলামÑ তরুণদের নিয়ে যদি খেলোয়াড় তৈরি করতে না পারি, তাহলে একটি পর্যায়ে এসে তারা হারিয়ে যাবে এবং যাচ্ছে। প্রথম দিকে আমি ওপর থেকে করতে চেয়েছিলাম, যেটা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন আমি খুবই উন্নতমানের একজন কোচ আনতে যাচ্ছি, যার কথা এখনো প্রকাশ করিনি। যিনি কোরিয়ার জিমন্যাস্টিকসকে বিশ^ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন। তার পরিকল্পনা প্রথম দিকে কোরিয় সরকার গ্রহণ করেনি। ফলে তিনি পদত্যাগ করে চলে যান। ৫ বছর পর দেশটির সরকার তাকে ডেকে এনে দায়িত্ব দিয়েছিল। যার সুফল হিসেবে কোরিয়া এখন বিশ^চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে শুরু করে অলিম্পিকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক লাভ করছে। সেই বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ কোচকে আমি বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনা করেছি। তার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যদি দেড় থেকে দুই বছর টানা কোচিং করাতে পারি, তাহলে উপমহাদেশের বড় আসরেই দলকে ফল এনে দিতে পারব। এটিই তার শেষ পরিকল্পনা। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষেই তিনি অবসর নিতে চান। বাংলাদেশের জিমন্যাস্টিকসকে অনন্য এক জায়াগায় পৌঁছে দিয়ে তিনি নিজের সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখতে চান। আমিও তার নির্দেশনা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। শিগগিরই তার সম্পর্কে আমি গণমাধ্যমকে জানাব।