logo
আপডেট : ১৪ মে, ২০২২ ০৯:৩৩
কালের দুঃখ ‘বাইকদুর্ঘটনা’
‘অপরিপক্ব হাতে বাইক নয়’
নিজস্ব প্রতিবেদক

কালের দুঃখ ‘বাইকদুর্ঘটনা’

দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

মোটরসাইকেল। যাতায়াত ব্যবস্থাকে ‘সহজতর’ করে তোলা এ বাহন সাম্প্রতিককালে জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে এনেছে। ব্যাপক হারে দেশে বেড়ে গেছে মোটরবাইকের সংখ্যা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়াবহ সব দুর্ঘটনা। একের পর ঘটা এসব দুর্ঘটনায় অকালে ঝরছে বহু তাজা প্রাণ। বাইক এক্রিডেন্টে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিও নেহায়েৎ কম নয়।


প্রতি বছর মোটরবাইক দুর্ঘটনায় অর্থনীতিতে লাগছে ২৫ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের ধাক্কা। তাছাড়া ফি-বছর ৫ লাখ মোটরসাইকেল বিপণন করে সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকা আয় হলেও দুর্ঘটনায় ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। দেশে সড়কে মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়; আর লাইসেন্স ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই তরুণদের মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো এর বড় কারণ।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সত্ত্বর ভাবতে হবে। আপাতত মোটরসাইকেল নিবন্ধন বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহণ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত না করতে পারলে ‘অপরিপক্ব’ হাতে মোটরসাইকেলের অবাধ ব্যবহার বন্ধ হবে না


রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (বি আরটিএ) তথ্য বলছে, দেশে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত যানবাহনের সংখ্যা ৫১ লাখের বেশি। যার মধ্যে মোটরসাইকেল ৩৬ লাখ! অর্থাৎ নিবন্ধিত মোট যানবাহনের চার ভাগের তিন ভাগেরও বেশি মোটরসাইকেল। বিভিন্ন কোম্পানি বছরে মোটরসাইকেল বিক্রিতে আয় করছে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু সবার অজান্তে ভয়ংকর এই যানে বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বের উন্নত শহরগুলোতে বিপজ্জনক যানের কারণে যখন মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ তখন দেশে এর বহুল ব্যবহার বাড়ছে। শহর ছাপিয়ে গ্রামের রাস্তা পর্যন্ত এখন এই যানের ছড়াছড়ি। গণপরিবহণের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই বাহন। মূলত এ কারণেই সড়কে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। মোট দুর্ঘটনার ৪৪ ভাগের বেশি এখন মোটরসাইকেলে।


অবাক বিষ্ময়ের ব্যাপার হলো, ৩৬ লাখ মোটরসাইকেল আরোহীর মধ্যে নিবন্ধিত চালক আছে সাড়ে ২৩ লাখ। অর্থাৎ ১৩ লাখ মোটরসাইকেল চালকের কোনো লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স ছাড়া গাড়িগুলো আরো বেশি বেপরোয়া, রাজপথে ছুটছে বিদ্যুৎ গতিতে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। এই পরিস্থিতিতে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদেও মতামত, গণপরিবহণের বিকল্প কখনই মোটরসাইকেল হতে পারে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহাসড়ক ও দূরপাল্লায় এই যান চলাচল নিষিদ্ধ করার বিকল্প নেই। বন্ধ করতে হবে রেজিস্ট্রেশনও। সেইসঙ্গে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া না হলে কোনো অবস্থাতেই সড়ক নিরাপদ করা যাবে না।


বলা বাহুল্য হবে, আমাদের দেশে গোটা পরিবহণ সেক্টরে একেবারেই অরাজকতা চলছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। লাইসেন্স ছাড়া গণপরিবহণ হিসেবে বাইকের ব্যবহার বেড়েছে। মহাসড়কে অবাধে চলছে। উঠতি বয়সী তরুণ যুবকরা মোটরসাইকেলের স্টিয়ারিং হাতে সড়কে একেবারেই বেপরোয়া। এই পরিস্থিতেতে দুর্ঘটনা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।


গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে যত হতাহতের ঘটনা ঘটছে, এর ৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণে হচ্ছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত মাত্র ১৬ দিনেই সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৮৪৪ জন। হিসাব মতে, এবারের ঈদে সড়কের মৃত্যুর এই সংখ্যা গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৩৫ শতাংশ।


পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়কে সত্ত্বর ভাবতে হবে। আপাতত মোটরসাইকেল নিবন্ধন বন্ধ ও আমদানি নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। পাশাপাশি সড়ক পরিবহণ আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত না করতে পারলে ‘অপরিপক্ব’ হাতে মোটরসাইকেলের অবাধ ব্যবহার বন্ধ হবে না।