logo
আপডেট : ১৪ মে, ২০২২ ১২:৫১
পতিত জমিতে হাসছে তিল
মাহফুজ নান্টু, কুমিল্লা

পতিত জমিতে হাসছে তিল

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা কুমিল্লার বুড়িচং। এ উপজেলার সীমান্ত ঘেষাঁ গ্রাম পাহাড়পুর। ওপাড়ে সতর্ক বিএসএফ, এদিকে বিজিবি। তার মাঝে দিগন্ত বিস্তৃত পতিত জমি। সেই পতিত জমিতে হাসছে অর্থকরী ফসল তিল। সবুজ পাতার ফাঁকে সাদা তিল ফুলে উড়ে উড়ে মধু খায় ভ্রমর-মৌমাছির দল। এসবের মধ্যেই কৃষকরা ব্যস্ত তিল গাছের পরিচর্যায়। তিল চাষে সময় ও খরচ কম। আর বাজারে তিলের তেলের চাহিদা থাকায় এ অর্থকরী চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুমিল্লার কৃষকদের।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার দুই হাজার ৮৪ হেক্টর জমিতে তিলের চাষ হয়েছে। যার মধ্যে জেলার তিতাস, মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর ও বুড়িচংয়ে এ তিল চাষ হয়েছে।

বুড়িচং উপজেলার পাহাড়পুর-জঙ্গলবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পতিত উঁচু জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। আগাছা নিড়ানিতে ব্যস্ত কৃষকরা। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

এ উপজেলার বেলবাড়ি গ্রামের কৃষক মো. আবদুল হান্নান। এ বছর নিজের এক একর জমিতে তিল চাষ করেছেন তিনি। আগে এই জমিগুলোতে তেমন কোনো ফসল হতো না।

আবদুল হান্নান বলেন, ‘বছরে একবার ধান চাষ করার চেষ্টা করতাম। তবে পানির অভাবে তাও সম্ভব হতো না। এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিল চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে।’

পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, ‘আগে তিল চাষের পদ্ধতি জানতাম না। এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিল চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি, চাষের খরচ বাদেও বেশ ভালো মুনাফা হবে।’

একই গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম বলেন, ‘এক একর জমিতে তিল চাষ করতে খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এই একর জমিতে তিল হবে ১২ মণ। সাড়ে চার হাজার টাকা দরে বিক্রি করলে ৫৪ হাজার টাকার তিল বিক্রি করা যাবে। খরচ বাদ দিলেও অন্তত ৪২ হাজার টাকা লাভ হবে।’

তিল ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন এক কৃষক

 

সীমান্তবর্তী এলাকায় তিল চাষের প্রথম পরিকল্পনা করেন বুড়িচং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায়। তিনি বলেন, ‘আমি সীমান্তবর্তী পাহাড়পুর, জঙ্গলবাড়ি ও বেলবাড়ি এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করি। সেখানে অনেক পতিত জমি দেখেছি। তারপর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে মিটিং করেছি। কৃষকদেরকে এক করেছি। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি।

‘তিলের বীজ-সার সংগ্রহ করে দিয়েছি। কৃষকরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে তিল চাষে একটা দারুণ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।’

তিনি জানান, গত বছর বুড়িচংয়ে পাঁচ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়। এ বছর চাষ হয়েছে আট হেক্টরে। শুধু সীমান্তবর্তী পতিত জমিতে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে নতুন করে তিল চাষ হয়েছে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর কুমিল্লার কৃষকদের মাঝে বারি তিল-২ ও বারি তিল-৪ এর বীজ বিতরণ করেছি।

কুমিল্লা রাজগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজগর বলেন, ‘বাজারে কালো ও বাদামি তিলের চাহিদা বেশি। কালো তিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা ও বাদামি তিল সাড়ে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়। রাজগঞ্জ ও চকবাজারে বাদামি তিলের চাহিদা বেশি। কারণ বাদামি তিলের তেলের গুণাগুণ খুব ভালো।’